পবিত্র মাহে রমজান। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে অন্যান্য মাসসমূহের উপর। এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের অন্যতম কারণ বা মাধ্যম পবিত্র কুরআন শরীফ। এই রমজানেই প্রভু অতীব দয়ালু হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর মহাপবিত্র গ্রন্থ কুরআন শরীফ নাজিল করেন। সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘রমজান এমন একটি মাস যার মধ্যে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। এই কুরআন শরীফ নাজিল মাহে রমজানের ফজিলত বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুনে। এই ফজিলত ভোগ করছি আমরাই। এটা বললে একটুও অত্যুক্তি হবে না যে, মাহে রমজানের বহু ফজিলত আমরা পাচ্ছি পবিত্র কুরআন শরীফের মাধ্যমে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে পবিত্র কুরআন শরীফের প্রতি আমাদের একটি হক্ব আছে। যেহেতু রমজান মাসেই আমরা এমন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠগ্রন্থ পেয়েছি, সেহেতু রমজানেই আমাদের হক্ব কিঞ্চিৎ হলেও আদায়ের উপর অধিকতর গুরুত্বরোপ করা উচিত। কর্তব্যপরায়ণ, শ্রদ্ধাশীলতা, কৃতজ্ঞতা এই শব্দগুলোর সাথেও তো একটু পরিচিত হওয়া উচিত, তাই নয় কি?
শ্রদ্ধাশীলতা আর কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি বহু ক্বারী (কুরআন তেলাওয়াতকারী) আছেন যাদের মূল টার্গেট সাওয়াব। অগণনীয় সাওয়াব। ক্ষণিকেই অত্যধিক পরিমাণে সাওয়াব সংগ্রহ করার মোক্ষম, সুবর্ণ সুযোগ করে দেয় মাহে রমজান। নফল পালনে ফরজের সওয়াব এবং তা দশ থেকে সাতশ গুনে বৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এটা রমজানের শ্রেষ্ঠত্বের বিশেষত্ব।
অপরদিকে সাহেবে কুরআন অর্থ্যাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুরআন শরীফের একটি হরফ তেলাওয়াতের বিনিময়ে দশটি নেকী হাসিল হয়। এটা কুরআন শরীফের বিশেষত্ব। এখন ধরুন আপনি মাহে রমজানে একটি হরফ তেলাওয়াত করলেন। নেকী হাসিল হলো ১০। অতঃপর রমজানের কারণে তা দশ থেকে সাতশ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং রমজানের কারণেই এই নফল ইবাদতটি আল্লাহর দরবারে ফরযের মর্যাদায় সিক্ত হচ্ছে। সুতরাং, যারা মাহে রমজানে পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করেন নিঃস্বন্দেহে তারা অফুরন্ত অগণনীয় সাওয়াবের অধিকারিই হয়ে থাকেন। রমজান ও কুরআন এই দুইয়ের বিশেষত্বকে এক সুথোয় গাঁথা যায় শুধুমাত্র একটি মাধ্যমে। তা হলো, ‘রমজান মাসে কুরআন তেলাওয়াত করা’।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শরীয়ত-তরিক্বতের বিভিন্ন ইমামগণ এই রমজান মাসেই অত্যধিক পরিমাণে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন। নিম্নে এমন কয়েকজনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করছি।
১. ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজান মাসে কুরআন শরীফ মোট ৬১ খতম দিতেন। প্রতিদিন এক খতম দিতেন। বাকি এক খতম পুরো রমজানের তারাবীহর নামাজে (তারিখে বাগদাদ : ত্রয়োদশ খ-)। ২. ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজান মাসে প্রতি রাতে এক খতম কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, একাদশ খ-) ৩. হযরত আবু কাতাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজান মাসে প্রতি তিন দিনে এক খতম কুরআন তেলাওয়াত করতেন। শেষ দশকে প্রতি রাতে এক খতম দিতেন (সিয়ারু আলামীন নুবালা, ষষ্ঠ খ-)।
কুরআন শরীফ মানবজীবনের অকাট্য সংবিধান। বিশেষতঃ আমাদের মুসলিমদের জন্য। নাজিল হয়েছে পবিত্র রমজান মাসে। তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এই বিশেষ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে হলেও রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা উচিত। আর রমজানে কুরআন তেলাওয়াত করলে যে ‘নুরুল আ’লা নুর’ হবে তেলাওয়াতকারীর জন্য সেটা আমি বিশ্লেষণ করে সকলের বোধগম্য করবার চেষ্টা করেছি।
নজরুল বলেছিলেন, ইসলাম সে তো পরশ-মানিক তারে কে পেয়েছে খুঁজি! পরশে তাহার সোনা হলো যারা তাদেরেই মোরা বুঝি! তো যারা ইসলামের পরশে সোনা হয়ে ইতিহাস সৃজন করেছে তাদের রমজানও কেটেছে কুরআনময়। রমজানের বিশেষত্বই কুরআন। প্রতি রজনীতে কুরআন খতম দিয়ে যেন আমাদেরকে এই মহান শিক্ষাই দিয়েছেন ইমাম আবু হানিফা এবং ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা।
আসুন, কুরআন নাযিলের মাসে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করার চেষ্টা করি। আমাদের রমজান হোক ‘কুরআনময়’। সূত্রঃ চ্যানেল আই।