শিক্ষার্থীদের নকল বন্ধ করতে পরীক্ষার হলে বসানো হয় ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। কেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষে বসানো ওই ক্যামেরা পরীক্ষা শুরুর আগে বন্ধ রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাপক অনিয়ম ও নকল করে বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) পরীক্ষা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আজ শুক্রবার পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাউফল সরকারি কলেজ কেন্দ্রে সিটি ক্যামেরা বন্ধ করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ওই কলেজের শিক্ষকদের মাধ্যমে কক্ষ পরিদর্শকরা নকলে সহযোগিতা করছেন।
গত ১১ মে থেকে বাউবির অধীনে স্নাতক (পাস) ও বিএসএস প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী এই পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ১০ আগস্ট। এতে বাউফল সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৪৫০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে প্রথম বর্ষে ৩১৮ জন, দ্বিতীয় বর্ষে ৩৩১ জন, তৃতীয় বর্ষে ২৮৯ জন, চতুর্থ বর্ষে ১৫২ জন, পঞ্চম বর্ষে ১৯২ জন ও ষষ্ঠ বর্ষে ১৬৮ জন।
এর আগে ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর পরীক্ষা চলাকালে বাউবি কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে আসেন। তখন তারা ব্যাপক অনিয়ম ও নকলের প্রবণতা দেখতে পান। এ ছাড়া বাউফল সরকারি কলেজ কেন্দ্রে একজনের পরীক্ষা অন্যজনে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। এ কারণে পরবর্তী বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয় ওই কেন্দ্রে থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজে। সেখানে সুষ্ঠু ও অপেক্ষাকৃত অনেকটা নকলমুক্ত পরিবেশে ওই বছর ভালো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এ বছর আবার বাউফল সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পরীক্ষা পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও বাংলা বিষয়ের প্রভাষক মো. রফিকুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতার জন্য আছেন একই কলেজের আরও তিনজন শিক্ষক। কিন্তু রফিকুল ইসলাম অধিকাংশ সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে অনুপস্থিত থাকেন।
আজ ছিল স্নাতক প্রথম বর্ষের ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা। বেলা ১১টার দিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম কেন্দ্রে নেয়। একই কলেজের ইসলামিক শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক মো. শহিদুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। পরীক্ষার্থীরা যে-যার মতো পরীক্ষা দিচ্ছে। নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রত্যেক কক্ষে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলেও তা বন্ধ রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির জন্য আবার ভেন্যু পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে করে যে কলেজের শিক্ষার্থী সেই কলেজেই পরীক্ষা দিতে পারছেন। কারণ ওই প্রভাবশালীরা পরীক্ষার কক্ষে বসে পরীক্ষা না দিয়েও বিগত পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন।
ওই শিক্ষক আরও বলেন, যে কলেজের ছাত্র সেই কলেজের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিলে কোনোভাবেই নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।
এক অভিভাবক বলেন, ‘উম্মুক্ত পরীক্ষা উম্মুক্তভাবে দেওয়ার জন্য ঠাণ্ডা ফি (অতিরিক্ত টাকা) বাবদ এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে।’
পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উম্মুক্ত পরীক্ষার নেওয়ার জন্য সিসি ক্যামেরার প্রয়োজন নেই। ঠাণ্ডা ফি বাবদ কোনো পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে পরীক্ষা পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জানতে চাইলে বাউবির উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘নকল যাতে না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’