দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ঈদের পর নতুন কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। খালেদার মুক্তি দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপি অনেক আইনজীবী।
আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স কক্ষে আলোচনা সভায় আগামী ঈদের পরে নতুন কর্মসূচির কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। খালেদা জিয়া ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মুক্তির দাবিতে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকায় লক্ষীপুর জাতীয়তাবাদী যুব ফোরাম।
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে কী হবে না-এটা এখন চলে গেছে সরকারের নিয়ন্ত্রণে, নিম্ন আদালতের বিচারকদের মাধ্যমে। এই বিচারকরা সরকার যা বলবেন, তাই করবে। কারণ সুপ্রিম কোর্টের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নাই, তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা এখন সরকারের কাছে। আইনি লড়াই এককভাবে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে সুবিধাজনক হবে না। আইনি লড়াইয়ের সাথে সাথে রাজপথের কোনো বিকল্প নাই। আমাদের এখন ধীরে ধীরে কঠোর কর্মসূচির দেওয়ার কথা চিন্তা ভাবনা করতে হবে। আমাদের ঈদের পরে এ বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চত করা–এই দুইটিই নির্ভর করবে যে, রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে এই সরকারের টনক নড়ানো যাবে না। কারণ তারা এতে কোনো সাড়া দেয় নাই। বরং উল্টো আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আরো বেশি করে মামলা দিয়েছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার কারণে।’
সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রেখেছেন। তারপরও কেন খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না, এটা জানতে হবে দেশবাসীকে। কারণ নিম্ন আদালতের কারণে। এই নিম্ন আদালত প্রশাসনের অধীনে কাজ করে, তারা সরকারের অধীনে কাজ করে। এই আদালত এখন স্বাধীন না।’
‘গতকালও দুইটি মামলা দিয়েছে। তারিখ দিয়েছে জুলাই মাসে। আমাদের দেশের উচ্চতম আদালত যাকে জামিন দিয়ে দিয়েছেন তাকে আমরা মুক্ত করতে পারছি না। কেনো? সরকারের এই অপকৌশল, সরকারের ষড়যন্ত্র। ওই মামলাগুলোতে জামিন না হওয়া পর্যন্ত উনাকে তো আমরা মুক্ত করতে পারব না। তারা (সরকার) চেষ্টা করবে এই মামলাগুলোকে আরও লম্বা লম্বা তারিখ দিতে। কারণ এই ম্যাজিস্ট্রেটরা, বিচারকরা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে।’
মওদুদ বলেন, ‘আমাদের দেশের যত গণতান্ত্রিক শক্তি আছে, তাদের ঐক্যবদ্ধ করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। রাজপথেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভবপর হবে। বর্তমান সংকটের উত্তর রাজপথের মাধ্যমে আমাদের অর্জন করতে হবে।’
‘নতুনভাবে চিন্তাভাবনা’
খুলনা সিটি করপোরেশ নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্য সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহনের বিষয়ে ‘নতুনভাবে চিন্তা’ করার কথা বলেন মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘খুলনায় নির্বাচন করেছে পুলিশ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাইতেও পুলিশ বাহিনী বেশি তৎপর ছিল। তারাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী যাতে জয়লাভ করে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই একই ঘটনা অন্যান্য সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘটবে। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিএনপি আর অংশগ্রহন করবে কি না, সে ব্যাপারে আমাদের নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। এটা অর্থহীন হবে এই ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহন করা।’
নির্বাচন কমিশনের ভুমিকার সমালোচনা করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে একটা জিনিস প্রমাণ হয়ে গেছে, এই নির্বাচন কমিশন একটি অদক্ষ, একটি অক্ষম, একটি পক্ষপাতদুষ্ট, একটি দলবাজ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে বাংলাদেশে কোনো স্বাধীন, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে বলে আমরা মনে করি না।’
মওদুদ বলেন, ‘এই কমিশনকে পূনর্গঠন করতে হবে এবং এমনভাবে পূনর্গঠন করতে হবে যাতে করে আমরা সত্যিকার অর্থে এমন ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন করতে পারি, যারা এই কমিশনের মাধ্যমে তারা তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। তাদের সাহস থাকবে, তাদের মনোবল থাকবে, তাদের দেশপ্রেম থাকবে, যাতে করে আগামীতে একটু সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। সেজন্য এখন আমাদের এটাও চিন্তা করতে হবে, এই কমিশনের অধীনে আমরা আর কোনো নির্বাচনে অংশ গ্রহন করব কী করব না।’
সংগঠনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী, লক্ষীপুর বিএনপির সহসভাপতি মনির আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ রশিদুল হাসান লিংকন।