ব্যাপক অনিয়মের নির্বাচনে খুলনায় নৌকা বিজয়ী

Slider রাজনীতি

318909_186

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বিজয়ী হয়েছেন। বেসরকারি ও স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত ফলাফলে ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৮৬টি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছেন এক লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট। অন্য দিকে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছেন এক লাখ আট হাজার ৯৫৬ ভোট। তবে রাত ১টা পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ১৬৩ কেন্দ্রের ফলাফলে দেখা যায় নৌকা পেয়েছে ৯৪৩৫২ ভোট আর ধানের শীষ পেয়েছে ৫৯৪৫৮ ভোট।
তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।
নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে। নৌকার প্রার্থীর পে কমপে ৯৫টি কেন্দ্রে নানা ধরনের অনিয়ম-জালিয়াতি হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বহু কেন্দ্র থেকে। অনেক কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে।
নির্বাচনে ছিল জাল ভোটের ছড়াছড়ি। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্প। ব্যালটে অবৈধভাবে সিল মারার অভিযোগে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সাময়িক স্থগিত রাখা হয় আরো দু’টি কেন্দ্রে। শুরুর দিকে ভোটগ্রহণ কিছুটা শান্তিপূর্ণ মনে হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। দুপুরের পর থেকে ২৮৯ কেন্দ্রের বেশির ভাগ থেকেই আসতে থাকে অনিয়মের খবর।
ভোটগ্রহণ শেষে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক জয়ের আশা প্রকাশ করেন। অন্য দিকে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির পর্যবেক্ষক লাঞ্ছিত : ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণে গেলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকেরা নির্বাচন কমিশনের একজন পর্যবেককে লাঞ্ছিত করেছেন। ভোটগ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। ভোট পর্যবেণে ইসির ওই কর্মকর্তা ঢাকা থেকে খুলনায় এসেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, নুরানী বহুমুখী মাদরাসা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার পর তিনি সেখান থেকে বের হয়ে যান। নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া প্রতিবেদকদের তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের ওই সমর্থকেরা নির্বাচন কমিশনের একটি গাড়ি ভাঙচুরেরও চেষ্টা চালায়। ওই ভোটকেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে হুমকি : একটি কেন্দ্রে জাল ভোট দিতে বাধা দেয়ায় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার উজ্জ্বল কুমার পালকে হুমকি দিয়েছে মতাসীন দলের সমর্থকেরা। এ ঘটনার পর ভোট শেষে বাড়ি ফেরার পর নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ওই কর্মকর্তা।
উজ্জ্বল জানান, বেলা ১১টায় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের সময় রূপসা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ৫ নম্বর বুথে হঠাৎ কয়েকজন লোক এসে ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়। পরে তারা নৌকায় সিল মারতে গেলে আমি তাতে বাধা দিয়েছি। এমনকি আমি সিল মারা ব্যালট পেপারগুলো বাক্সে ভরতে দিইনি। তারা আমার নাম পরিচয় জেনে গেছে। ভোট শেষ হলে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়।
তিনি বলেন, আমার কাছে থাকা ১০০ ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। যার সিরিয়াল নং ০০৪৫৮৪০১ থেকে ০০৪৫৮৫০১ পর্যন্ত। সেগুলো সিল মেরে বাক্সে দিতে দিইনি। আমি তাদের বাধা দিলে তারা আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। ঘটনার পর এ কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত হয়ে যায়। পাশে আরো একটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার প্রমাণ পাওয়ার পর সেটিতেও ভোট স্থগিত করা হয়।
পোলিং এজেন্ট আটক : আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সেই পাইওনিয়ার গার্লস স্কুল কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১২টায় বিএনপির পোলিং এজেন্টদের আটকে রাখে নৌকার সমর্থকেরা। এ সময় তাদের মোবাইল, মানিব্যাগও জব্দ করে রাখে তারা। পরে বেলা আড়াইটায় সেখানকার ধানের শীষের একজন পোলিং এজেন্ট এ প্রতিবেদককে জানান, সাড়ে ১২টায় তাদের কেন্দ্রে সব বুথ দখল করে নৌকার লোকজন। আমি সেখান থেকে কিছুণ আগে ছাড়া পেয়েছি।
একই অবস্থা দেখা গেছে নগরীর সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রেও। সেখানে ব্যালট পেপার বাইরে এনে সিল মেরে নিজস্ব ভোটার দিয়ে আবারো তা ভেতরে পাঠিয়ে ব্যালট বাক্সে রাখতে দেখা গেছে। তবে দায়িত্বরত কোনো নির্বাচনী কর্মকর্তাই বিষয়টি স্বীকার করেননি।
নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আহসান উল্লাহ কলেজ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার বাইরে এনে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে সেখানে প্রকাশ্যে সিল মারা হলেও প্রশাসনের প থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী শমসের আলী মিন্টু অভিযোগ করেন তার প্রতিপ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীরা ভোট ডাকাতি করেছে। তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে সিল মেরেছে।
খুলনা আলিয়া মাদরাসা কেন্দ্রের বাইরে সকাল থেকে একা একা ঘোরাফেরা করছিলেন ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বদরুল আনাম। তিনি জানান, আগের রাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে তালুকদার আবদুল খালেকের কর্মীরা। ফলে সকালে তিনি ভোটারদের স্লিপ দেয়ার মতো কোনো কর্মী পাচ্ছিলেন না।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নূরানী বহুমুখী মাদরাসা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকেরা সকাল থেকেই ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মারতে থাকে। এক তরুণের জাল ভোটের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করা হলে সেটি ডিলিট না করা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীকে সেখান থেকে আসতে দেয়া হয়নি। একই ওয়ার্ডের সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে একদল যুবক প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে থাকে। সাংবাদিকেরা সেখানে পৌঁছলে তারা দীর্ঘ সময় সাংবাদিকদের ঘিরে রাখে। পরে সাংবাদিকেরা সেখান থেকে চলে এলে আবারা কেন্দ্রে প্রবেশ করে সিল মারতে থাকে।
ডিস্টার্ব করবেন না : শিপইয়ার্ড কেন্দ্রে পৌঁছার আগেই একজন বৃদ্ধ ভোটার জানান, শিপইয়ার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একদল যুবক প্রবেশ করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ঢোকাতে থাকে। পরে কেন্দ্রে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। একটু সামনে গিয়ে মতিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে দাঁড়ানোর পরে একজন কিশোর এসে বলেন, ‘রাসেল ভাই সালাম দিয়েছে, আপনারা এখানে থাকলে আমাদের কাজে ডিস্টার্ব হবে। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে যান’।
রূপসা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে খানিকটা দূরে কয়েকজন কর্মী নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান। তিনি জানান, এ কেন্দ্রে তাদের পোলিং এজেন্ট ছিলেন সেলিম কাজী। সকাল পৌনে ৯টায় নৌকার সমর্থকেরা তাকে পিটিয়ে আহত করে। পরে তাকে খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর ওই কেন্দ্রে আর কোনো পোলিং এজেন্ট দেয়া সম্ভব হয়নি। তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় নৌকার ব্যাজ গলায় ঝুলানো বেশ কয়েকজন এসে কী লেখা হচ্ছে তা জানতে চায় এবং বিকেল ৪টার পর আরো অনেক মাথাফাটা লোকের নাম লিখতে হবে বলে জানিয়ে দেয়। প্রিজাইডিং অফিসার তালাবদ্ধ : সরকারি ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা পৌনে ১১টায় একদল যুবক প্রবেশ করে দ্বিতীয়তলায় অবস্থিত ৭ নম্বর বুথের সব ব্যালট পেপার নিয়ে নৌকায় সিল মারে। প্রিজাইডিং অফিসার খলিলুর রহমান বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাকে এক কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। পরে ভোট নেয়ার মতো ব্যালট পেপার না থাকায় সেই বুথের ভোটারদের ফেরত দেয়া হয়। একপর্যায়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হলে সহকারী রিটার্নিং অফিসার আনিসুর রহমান সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে আলোচনা করে কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
নৌকায় সিল মারা ব্যালট সরবরাহ : আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বাসভবনের পাশে ফাতেমা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথে ভোট শুরুর আগেই তার কর্মীরা ব্যালটের একটি বইয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে রাখে। পরে ভোটাররা ভোট দিতে এলে তাদের সিল মারা ব্যালট দেয়া হয়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে সেই বুথের ভোট স্থগিত করা হয়।
বেলা ২টার পর বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বাসভবনের পাশে রহিমা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তার পোলিং এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দেয় তালুকদার আবদুল খালেকের সমর্থকেরা।
হামলা ও ভাঙচুর : ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুব কায়সারের এজেন্ট আলী আকবরকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাহবুব কায়সার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের রূপসা স্কুলকেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট সেলিম কাজীকে মারধর করা হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আব্দুল মালেক ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সামনের নির্বাচনী ক্যাম্পও। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মহানগরীর জিলা স্কুল কেন্দ্রে আলী আকবরকে মারধর করে কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিকুর সমর্থকেরা। পরে তাকে খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খালিশপুর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের জামিয়াহ তৈয়্যেবাহ নূরানী তালিমুল কুরআন মাদরাসা কেন্দ্র থেকে সিরাজকে কুপিয়ে আহত এবং তার ভাই আলমকে মারধর করা হয়। তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ওয়ার্ডে জামিয়া ইসলামিয়া আশরাফুল উলুম বয়স্ক মাদরাসা কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী জামান মোল্লা জেলিনের এজেন্ট আসাদ ও হাবিবকে সকালেই কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়।
ছোরাব শেখের ভোট কে দিলো? এ নির্বাচনে নিজের ভোট দিতে পারেননি এক ভোটার। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেরেবাংলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
ছোরাব শেখ নামে ওই ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, তিনি দীর্ঘণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী কর্মকর্তা তাকে জানান, তার ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। তিনি ােভ প্রকাশ করে প্রশ্ন রাখেনÑ ‘তাহলে আমার ভোট কে দিলো’ ?
এ অভিযোগের ব্যাপারে প্রিজাইডিং অফিসার পরিতোষ কুমার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ভোটারকে ডেকেছি, উনি এলে বিষয়টার সুরাহা করা হবে।
প্রকাশ্যে সিল : নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আহসান উল্লাহ কলেজ কেন্দ্রের ব্যালট পেপার বাইরে এনে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে সেখানে প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের প থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী শমসের আলী মিন্টু অভিযোগ করেন তার প্রতিপ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীরা ভোট ডাকাতি করেছে তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে সিল মেরে।
বয়রা কলেজ মোড়ে স্থানীয় আওয়ামী-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যারিকেড দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম মিন্টুর নির্দেশে ভোট কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি সমর্থকেরা।
১ নম্বর ওয়ার্ডের মহেশ্বরপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের অবস্থা প্রায় একই রকম। ৩০ নম্বর খুলনা কলেজ গেট কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পে ভোট ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্র থেকেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের কর্মী বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোট কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রায়ের মহল তালতলা প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে দলটির মূল প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। স্থানীয় ভোটার আবুল কাসেম ব্যাপারী বলেন, তার এক ছেলে ও পুত্রবধূ কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারেননি।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২৩৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। মূলত সেসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র থেকেই ভোট ডাকাতির খবর আসতে থাকে দুপুরের পর থেকে।
এজেন্ট নেই ধানের শীষের : নগরীর বয়রা এলাকার রায়ের মহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এ কেন্দ্রের ৫ নম্বর বুথে ধানের শীষ ও লাঙ্গল প্রতীকের মেয়রপ্রার্থীর কোনো এজেন্ট নেই। পাশের ৪ নম্বর বুথে ধানের শীষের এজেন্ট এলেও তাকে সিটে পাওয়া যায়নি। প্রচণ্ড রোদ থাকায় মাঠে ভোটারের লাইন ছিল ফাঁকা।
তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত : সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোরপূর্বক ব্যালটে সিল মারার কারণে তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হলো ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র, ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্র ও রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র।
দুপুর ১২টায় ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বেলা ২টায় ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়, প্রায় একই সময়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয় রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ।
ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট শুরুর পর সকাল সাড়ে ১০টায় ওই কেন্দ্রে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক জোর করে ঢুকে পড়ে। তারা কেন্দ্রের ৭ নম্বর বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মেরে বাক্সে ভরতে থাকে। এ ঘটনার পর বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা খলিলুর রহমান এই কেন্দ্রে ভোট স্থগিতের ঘোষণা দেন।
প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বলেন, তিনি পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেছে কি না, তা তার জানা নেই। বেলা সাড়ে ১২টায় ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্রে একদল যুবক ঢুকে ব্যালটে সিল মারতে থাকে। তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেলের নির্বাচনী প্রতীকে সিল মারতে থাকে। এ কেন্দ্রের মোট ভোটার এক হাজার ৬৯১ জন। প্রায় আধা ঘণ্টা তারা ব্যালটে সিল মারেন। এরপর পুলিশ এলে তারা চলে যান।
ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আলীম হোসেন বলেন, দুর্বৃত্তরা ব্যালটে সিল মারলেও তা বাক্সে ভরতে পারেনি। পরে ২টায় কেন্দ্র স্থগিত করা হয়।
দুপুরের দিকে রূপসা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকেরা জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ইবনুর রহমান সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন।
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মোশাররফ হোসেন বলেন, অতর্কিত ১০ থেকে ১২ জন লোক রুমে প্রবেশ করে। তারা আমার কাছে থাকা ১০০ ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে নৌকায় সিল মারে। পরে সেটা বাক্সে ভরে চলে যায়। আমি বাধা দিলে তারা আমাকে হুমকি দেয়।
ভোট দিলো সাত বছরের শিশু : নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নূরানী বহুমুখী মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দিয়েছে সাত বছরের শিশু। দুপুরে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি তার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়–য়া ছেলেকে নিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হচ্ছেন। বাবা-ছেলে দুইজনের হাতেই ছিল ভোট দেয়ার সময় লাগানো অমোচনীয় কালি। ভোট দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, আমার ছেলেও ভোট দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *