খুলনা: খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিজের ভোট দিতে পারেননি এক ভোটার। আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় নগরীর ৬নং ওয়ার্ডের শেরে বাংলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
ছোরাব শেখ নামে ওই ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী কর্মকর্তা তাকে জানান যে, তার ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন রাখেন- ‘তাহলে আমার ভোট কে দিলো?’
এ অভিযোগের ব্যাপারে সেখানে কর্তব্যরত প্রিসাইডিং অফিসার পরিতোষ কুমার বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। ভোটারকে ডেকেছি, ওনি এলে এ বিষয়টার সুরাহা করা হবে।’
এদিকে, ভোট শুরুর প্রথম ঘন্টায় ৩০টি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
সকাল পৌনে ৯টায় রহিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট প্রদান শেষে এ অভিযোগ করেন তিনি।
মঞ্জু বলেন, এসব অভিযোগ জানাতে রিটার্নিং অফিসারকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তিনি বলেন, জনগণ এ নির্বাচন চায়নি। এখনো সময় আছে। ২২ নম্বর, ২৯, ৩০, ৩১, ২৮,২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বহু কেন্দ্রে সরকারি দলের ক্যাডাররা দখল করে নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি তারপরেও শেষ পর্যন্ত থাকবো। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে মেন নেব। ভোট ডাকাতির নির্বাচন মেনে নেব না।
মঞ্জুর আশঙ্কাই কি সত্যি হচ্ছে?
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ডাকাতির আশঙ্কা করেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সুষ্ঠু ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের তৎপরতা থাকলেও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে বেশ সন্দেহ রয়েছে। সোমবার রাতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে ব্যক্তিগত আলাপ চারিতায়ও মঞ্জুর আশঙ্কার সাথে মিল পাওয়া গেছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর বিএনপির কোন আস্থা নেই। নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণেও দৃশ্যমান কিছু দেখাতে পারছেনা ইসি। তাই খুলনা সিটি করপোরশেন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করে এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায় তারা। কিন্তু মাঠ প্রশাসনের কাছ থেকে তারা কোন সহযোগীতা পাচ্ছে না। তফসিল ঘোষণার পরেও ইসির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেনা পুলিশ। এতে করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কর্মীনয় সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। ভোটের দুই দিন আগে বিএনপির প্রার্থী তাদের ১৩০ জনকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ করেছেন।
যদিও খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলছেন, যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের দৃষ্টিতে তারা শুধুই আসামি, রাজনৈতিক কর্মী নয়।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। আওয়ামী লীগ মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমাদের নেতাকর্মীসহ পোলিং এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও আটক করছে পুলিশ। শতাধিক কেন্দ্রে কারচুপির আশঙ্কা করছি। তবে আমরা পিছু হটব না। নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে কোনোভাবেই ভোট কেন্দ্র ছাড়া যাবে না। আমরা চাই, দেশের মানুষ দেখুক, বিএনপির বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ কতটা মরিয়া।
গত ২৪ এপ্রিল ভোটের প্রচার শুরুর পর থেকেই মঞ্জুর অভিযোগ ছিল, তিনি নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে পারছেন না। তার কর্মী-সমর্থকদেরকে হয়রানি করছে পুলিশ।
মঙ্গলবার ভোটের আগের রাতেও রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলীর কাছে বেশ কিছু অভিযোগ জমা দেন মঞ্জু। কেএমপি কমিশনার, পাঁচ থানার ওসি, ডিসি ডিবি প্রত্যাহার এবং হোটেলগুলোতে বহিরাগতদের ধরতে তল্লাশি চালানোর দাবি জানিয়েছে।