ঢাকা: দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং জোরপূর্বক গুম নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি। সেই সঙ্গে সরকারি বাহিনীর অতিরিক্ত মাত্রায় শক্তি প্রয়োগের বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে তাদের।
বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করে এসব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনায় একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে বৈশ্বিক ওই সংস্থাটি। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে অনুষ্ঠেয় ইউনিভার্সেল পিরিওডিক রিভিউ’র (ইউপিআর) প্রস্তুতিতে ঢাকা থেকে সংস্থাটির পাঠানো প্রতিবেদনে এসব উদ্বেগ ও সুপারিশ স্থান পেয়েছে। তথ্য মতে, জেনেভায় গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বসছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল। এর আগে বাংলাদেশ বিষয়ে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি এবং ’১৩ সালের এপ্রিলে সেই পর্যালোচনা হয়েছিল।
আজকের পর্যালোচনায় এরইমধ্যে জমা হওয়া সরকারি প্রতিবেদন, জাতিসংঘের স্থানীয় কার্যালয়ের প্রতিবেদন, স্বাধীন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও গ্রুপগুলোর প্রতিবেদন এবং জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের প্রতিবেদন এবং তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের সর্বজনীন মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি মূল্যায়ন হবে। উল্লেখ্য, ১৮ই মে পর্যন্ত চলা ওই পর্যালোচনায় বাংলাদেশ ছাড়াও আরো ১৩টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা হবে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ওই পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। প্রতিনিধিদলে আইন, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও জেনেভাস্থ বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কূটনীতিকরা রয়েছেন। সভায় র্যাপোর্টিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে রুয়ান্ডা, আফগানিস্তান ও ইউক্রেন। সূত্র মতে, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম এবং সরকারি বাহিনীর দ্বারা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ নিয়ে তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। জোরপূর্বক গুমের বিষয়েও ভিন্নমত রয়েছে সরকার এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে। দেশের বিদ্যমান আইনেও জোরপূর্বক গুমকে কার্যকরী ভাবে অপরাধমূলক হিসেবে দেখা হয় না। ফলে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে আইন অমান্যকারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি বিদ্যমান আইন সংশোধন এবং শক্তি প্রয়োগের মাত্রা সীমিত করার সুপারিশ করেছে। সেই সঙ্গে সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত, গুম, অতিরিক্ত বল প্রয়োগের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছে। আর সেটি করতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে। যে কমিশন স্বচ্ছভাবে জবাবদিহিতার মাধ্যমে তদন্ত কাজ সম্পন্ন ও তা পরিচালনা করতে পারবে।
জাতিসংঘ কমিটির পাঠানো প্রতিবেদন বিষয়ে জানতে চাইলে জেনেভা-প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত সরকারের দায়িত্বশীল এক কূটনীতিক বলেন- আমরা তাদের রিপোর্ট, উদ্বেগ ও সুপারিশ সম্পর্কে অবহিত। এ নিয়ে সরকারেরও অনেক কিছু বলার আছে। প্রত্যেকটি ঘটনার প্রেক্ষিত এবং বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে। এ নিয়ে ঢালাও মন্তব্য নয়, বরং প্রত্যেকটি ঘটনার প্রেক্ষিত ভিন্ন। আলোচনা বা পর্যালোচনায় বিষয়গুলো এলে নিশ্চিতভাবে এ বিষয়ে সরকারের তরফে ব্যাখ্যা দেয়া হবে। সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্সের’ বিষয়টিই জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্ব অবহিত। সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের স্থান বাংলাদেশের মাটিতে হবে না এটি বহুভাবে প্রমাণিত। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলোর জোরালোভাবে তুলে ধরার প্রস্তুতি চলছে। উল্লেখ্য, ইউপিআর-এর আওতায় জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিই পর্যালোচনা করা হয়।