‘বার কাউন্সিল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না’

Slider রাজনীতি

317856_143

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে সরকারের কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন এবারের নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে সকল প্রতিষ্ঠানেই এই সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে নিরপেক্ষ্য নির্বাচন মুখ থুবরে পড়েছে।

শনিবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

অভিযোগ করে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, গত ১০ মে খুলনায় প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে বিকাল ৩.৩০ মিনিটে নির্বাচন (বার কাউন্সিল নির্বাচন) সংক্রান্ত আলোচনা সভায় ‘ই’ গ্রুপের আঞ্চলিক প্রার্থী অ্যাডভোকেট এসআর ফারুকের এজেন্টদের কাছ থেকে নির্বাচনী ফলাফল গ্রহণ এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক সাক্ষরিত রেজাল্ট সিট এজেন্টদের কাছে প্রদান করার জন্য কথা বলেন। এ সময় ‘ই’ গ্রুপের সাদা প্যানেলের প্রার্থী (আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবী প্যানেল) পারভেজ আলম আপত্তি তোলেন এবং নির্বাচনী ফলাফল গ্রহণ এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক সাক্ষ্যরিত রেজাল্ট সিট এজেন্টদের কাছে প্রদান করা হবেনা মর্মে জানায়। এবং এজেন্টদের প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে আনতে হবে বলে তিনি জোরালোভাবে বক্তব্য রাখেন।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, নীল প্যানেলের পরিচিতি অনুষ্ঠানে ঝালকাঠি যাওয়ার পর জানতে পারি যে, ঝালকাঠি জেলায় আসন্ন ভোটের দিন (আগামী ১৪ মে) আইনজীবীদের হয় দেখিয়ে ভোট দিতে হবে নয়ত তাদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া হবে না মর্মে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে।

বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভোট গ্রহনের নিয়ম সম্পর্কে এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, নির্বাচনের আচরণবিধি সংক্রান্ত যে বিজ্ঝপ্তি প্রদান করা হয়েছে তাতে জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা পাসপোর্ট এবং স্ব স্ব আইনজীবী সিমিতির পরিচয়পত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করার নিয়ম রয়েছে।

তবে সুপ্রিম কোর্টের অনেক ভোটারকে তাদের মতামত ছাড়াই বিভিন্ন জেলার আইনজীবী সমিতির ভোটার বানানো হয়েছে এতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ ও অসম্মানিত বোধ করছেন। তাছাড়াও ওই সকল বিজ্ঞ আইনজীবীগণ বিভিন্ন জেলার জজ কোর্টে গিয়ে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন বলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী অভিযোগ করেন।

উদ্বুত পরিস্থিতিতে নীল প্যানেলের পক্ষ থেকে আমরা এই সংবাদ সম্মেরনের আয়োজন করেছি। এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারগণদের অনুরোধ করতে চাই যে, এই নির্বাচন নিয়ে কোনোরকম অনিয়ম করা যাবেনা। স্বচ্ছতার সঙ্গে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। প্রার্থীর স্বাক্ষরকৃত ও নিয়োগকৃত এজেন্টকে অবশ্যই ভোট গণনার ফলাফল সম্বলিত রেজাল্ট সিট প্রদান করতে হবে। উক্ত রেজাল্ট সিটে কোনো প্রকার কাটা ছেড়া বা ঘষা মাজা থাকতে পারবে না। ভোটারদের স্ব স্ব আইনজীবী সমিতির পরিচয়পত্র দিয়ে ভোট প্রদানের সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের ভোটারদের আগামী রোববারের (১৩ মে) মধ্যে সাপ্লিমেন্টারি ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে ভোট (ভোট কেন্দ্রে) দেয়ার সুযোগ দিতে হবে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ অনুসারে প্রতি তিন বছরে একবার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে অনুসারে আগামী ১৪ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন নির্ধারণ রয়েছে। বার কাউন্সিল মূলত ১৫ সদস্যের কমিটির দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। উক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে ১৪ জন সদস্য নির্বাচিত হয়ে বার কাউন্সিল পরিচালনার দায়িত্ব পান। তবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনী কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধীকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যার কারণে এই পদ ব্যাতিত অবশিষ্ট ১৪ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

এবারের নির্বাচনে ভোটার হলেন ৪৩ হাজার ৭১৩ জন আইনজীবী। নিয়ম অনুসারে, ১৪টি পদের মধ্যে আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে ৭ জন এবং আঞ্চলিকভাবে (গ্রুপ আসনে) ৭ জন আইনজীবী বার কাউন্সিল পরিচালনার জন্য সদস্য নির্বাচিত হন।

পরে নির্বাচিত ১৪ সদস্যের মধ্যে থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও মতামতের ভিত্তিতে একজনকে ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়।

এই নির্বাচনের আঞ্চলিক গ্রুপ সাতটি হলো,‘গ্রুপ এ’ তে ঢাকা জেলার সকল আইনজীবী সমিতি,‘গ্রুপ বি’ তে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতি, ‘গ্রুপ সি’ তে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতি, ‘গ্রুপ ডি’ তে কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি, ‘গ্রুপ ই’ তে খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি, ‘গ্রুপ এফ’-এর মধ্যে রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি এবং ‘গ্রুপ জি’ তে রয়েছে দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *