ধানের শীষের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে মামলা, স্ত্রীও আছেন তালিকায়

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

674fc7dd0d2e8e2728ec99c1b2c832a1-5af3ff297177f

ঢাকা: গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ঘনিষ্ঠরাই এখন টার্গেট। হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেয়ার দিন ৬ই মে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে টঙ্গী থানা পুলিশ। সে মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট জোনাল ও কেন্দ্র কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং হাসান উদ্দিন সরকারের ঘনিষ্ঠদের। আইনি জটিলতায় ফেলে গ্রেপ্তার ও হয়রানির মাধ্যমে তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রেখে হাসান সরকারকে একলা করার নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং নির্বাচনের তফসিল নিয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম আজহারুল ইসলাম রিটের প্রেক্ষিতে ৬ই মে গাজীপুর সিটি নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন হাইকোর্ট। তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষণা দেন বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

পরে তিনি আপিল করলে সে আপিলে দুইদিন পর পক্ষভুক্ত হয় ইসি ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তবে নির্বাচন কমিশন জানায়, ১৫ই মে’র পূর্বনির্ধারিত সময়ে গাজীপুরে ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে না। এমন পরিস্থিতিতে আপিল শুনানি শেষে গাজীপুরে আসামি ২৮শে জুনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে বলেছেন আদালত। ফলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধা কেটেছে। এদিকে নির্বাচন স্থগিতের আদেশের দিন গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ১০৩ নেতাকর্মীকে আসামি করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করে টঙ্গি থানা পুলিশ। যদিও ওই গাড়িটি অক্ষত অবস্থায় থানায় রয়েছে। এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি আছে আরো এক থেকে দেড়শ’ জন। একই দিন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ ১৩ জনকে টঙ্গী পৌর ভবনের সামনে থেকে আটক করা হয়। রাতে নোমানকে ছেড়ে দিলেও অন্যদের পাঠানো হয় কারাগারে। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কাজী ছায়েদুল আলম বাবুল, মিডিয়া সমন্বয়ক ডা. মাজহারুল আলম, নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, কাশিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন চেয়ারম্যান, গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন, বাসন ইউপি বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাবুল চেয়ারম্যান, কমিশনার হান্নান মিয়া হান্নু, বশির আহমেদ বাচ্চুসহ ৪৮ জনই বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আছেন। বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকারের স্ত্রীকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
নির্বাচন পেছানো ও মামলা নিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, সরকারদলীয় লোকের রিটে মাত্র এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন স্থগিত করা হল। আমি আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম সংবাদ সম্মেলন করে। আইনি লড়াইয়ে আমি জিতেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মাঠের লড়াইয়েও জনগণ সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে। জনগণই বিচার করবে কেন সরকার দলীয় লোক রিট করে নির্বাচন স্থগিত করেছিল। তিনি বলেন, আদালত আগামি ২৮শে জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে বলেছে। আমি চেয়েছি নির্বাচনটি যেন জুনের ২৬-২৭ তারিখে হয়। কারণ গাজীপুর সিটির ভোটারদের বড় অংশটির স্থায়ী ঠিকানা দেশের বিভিন্ন জেলায়। তাদের কাছে ভোটাধিকার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বছরে একবার ঈদের সময় বাড়িতে স্বজনদের কাছে যাওয়াও আবেগের এবং গুরুত্বের। আমার চাওয়া তারা যেন ঈদের ছুটির পর গাজীপুরে ফিরে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায়। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুরের মামলা নিয়ে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার ও আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি না করার অনুরোধ জানিয়েছি। তারা সেটা প্রত্যাহার না করলে এর বিরুদ্ধেও আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে নির্বাচন স্থগিত থেকে মামলা দায়ের এবং মামলায় আসামিদের নামের তালিকা একটি বিষয়কে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিষয়টি হচ্ছে, সরকার আমার নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও আমার ঘনিষ্ঠদের আইনি জটিলতায় গ্রেপ্তার-হয়রানির মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রেখে আমাকে একলা করতে চায়।
গাজীপুর জেলা বিএনপি সভাপতি ও সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন বলেন, নির্বাচন স্থগিতের রিট করেছে সরকার দলীয় এক নেতা। আমরা মনে করি, গাজীপুরে ধানের শীষের প্রার্থীর প্রতি জনগণের যে সাড়া পড়েছিল সেটা দেখে পরাজয়ের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল সরকার। সে আতঙ্ক থেকেই তারা নির্বাচন স্থগিত করে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ারের টেম্পোকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এখন হয়তো খুলনা সিটি নির্বাচনের ফলাফল কি হচ্ছে, তা দেখেই গাজীপুর সিটি নির্বাচন করতে চায় সরকার। তবে আমাদের আপিলের কারণে আসামি জুনে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিস্থিতি বুঝে সেখানে আপিলে পক্ষ হয়েছে। আদালতের রায়ে আমাদের বিজয় হয়েছে, ভোটের মাঠেও বিজয় প্রত্যাশা করি। মিলন বলেন, গাজীপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটা তাদের অপরাধের কারণে নয়, দলের জনপ্রিয়তার কারণে। মামলাটি যে ভুয়া ও ভিত্তিহীন সেটা ইতিমধ্যে গণমাধ্যমের সংবাদেই প্রমাণ হয়ে গেছে। মূলত বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণাসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও আইনি জটিলতার মাধ্যমে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই এ মামলা দেয়া হয়েছে। মামলার অধিকাংশ আসামিই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ। এ থেকেই বুঝা যায়, জনগণের প্রতি আস্থা হারিয়ে সরকার এখন গ্রেপ্তার-হয়রানির মাধ্যমে বিএনপির নিশ্চিত জয় কেড়ে নিতে চায়। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর মিডিয়া সমন্বয়ক ডা. মাজহারুল আলম বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক নয়। এর পেছনে নিশ্চিতভাবেই সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। কারণ গাজীপুরে সরকারদলীয় প্রার্থী যেখানে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে পারেনি সেখানে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা দিনের পর দিন চষে বেড়িয়েছেন গাজীপুর সিটি। মানুষের ব্যাপক সাড়ায় চারদিকে ধানের শীষের জোয়ার উঠেছিল। ব্যালট যুদ্ধে হারার ভয় থেকে দলীয় নেতাকে দিয়ে রিটের মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত করেছে সরকার। তিনি বলেন, নির্বাচন স্থগিতের পর গাজীপুরের মানুষের মধ্যে যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল তার কোনো বিস্ফোরণ ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আসামি করা হয়েছে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে। প্রচার চালানো হয়েছে, যেখানেই বিএনপি নেতাকর্মীদের পাওয়া যাবে যেখানেই গ্রেপ্তার করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *