লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে বের করে দেয়া মরিয়মের মাঠে সন্তান প্রসব

Slider গ্রাম বাংলা

317362_170

মধ্যরাতে সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বের করে দেয়ার পর খোলা আকাশের নীচে সন্তান প্রসব করলেন এর নারী। তার নাম মরিয়ম। গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে।

পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় প্রসুতি মা মরিয়মকে বেসরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওখানে তাকে দুই ব্যাগ রক্ত দেয়ার পর এখন অনেকটা সুস্থ আছেন তিনি। তবে তার নবজাতকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

ওই প্রসুতির স্বজনদের অভিযোগ, বুধবার রাত দশটার দিকে প্রসব বেদনা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান মরিয়ম বেগম। ওই সময় প্রসব ব্যাথায় কাতর মরিয়ম ছটফট করছিলেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন তাকে দেখার পর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স ছায়া চৌধুরীর কাছে পাঠান। কিন্তু নার্স ছায়া চৌধুরী কোনো কথা না শুনেই এই প্রসুতি মায়ের সাথে দূর্ব্যবহার করেন। এক পর্যায়ে জোর করে হাসপাতাল থেকে তাদের বের করে দেন।

মরিয়মের সাথে থাকা তার চাচি শ্বাশুড়ি আবিয়া খাতুন বলেন, হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার মাত্র দু-তিন মিনিটের মাথায় হাসপাতালের মাঠে খোলা আকাশের নীচেই মরিয়ম সন্তান প্রসব করে। এ সময় সদ্য জন্ম নেয়া শিশুটি নিস্তেজ পয়ে পড়ে। পরে খবর পেয়ে পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঘটনা স্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে লোহাগাড়া বেসরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান।

যোগাযোগ করা হলে রাতে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্ব থাকা চিকিৎসক ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যখন ওই প্রসুতি মা হাসপাতালে আসেন আমি হাসপাতালের সিনিয়র নার্স ছায়া চৌধুরীকে দিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখলাম বাচ্চা উল্টো দিকে আছে। তাছাড়া রোগির প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। এ ধরনের রোগি ঝুকিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক প্রসবও অসম্ভব। তাই আমরা হাসপাতালে রাখতে চাইনি। বলেছি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তবে রোগির স্বজনরা আমাদের জানান, অত্যন্ত গরীব ও চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেয়ার মত সাধ্য নেই। এর মধ্যেই তারা রোগিকে নিয়ে হাসপাতালের বাহিরে গিয়ে অবস্থান নিতেই সঙ্গে থাকা ধাত্রী মহিলা মরিয়মের গর্ভ থেকে বাচ্চা টেনে বের করে ফেলে। শুনেই আমি সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে যাই এবং পরীক্ষা করে দেখি বাচ্চা মৃত। এর মধ্যে প্রসুতি ওই মহিলাও খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। পরে তার স্বজনরা এসে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছে বলে শুনেছ ‘।

হাসপাতালের গাইনী কলনসালটেন্ট ডা. কানিজ নাছিমা আক্তার বলেন, ‘ভাই, আজ আমি ছুটিতে আছি, গতকালও আমি দায়িত্ব পালন করেছি। স্বাভাবিক বা সিজার সব ধরনের প্রসবের ব্যবস্থা হাসপাতালে আছে। গতকাল আমাকে হাসপাতাল থেকে কেউ ব্যাপারটি জানাননি। তাই এই বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না। তবে হাসপাতালে প্রসুতি মাদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আছে।’

এদিকে প্রসবের পর এ-মুমুর্ষু রোগিকে কেন হাসপাতালে ভর্তি করাননি জানতে চাইলে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি রোগির প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে, তাই তাকে রক্ত দেয়া লাগবে। এ রকম রোগিকে ১ থেকে ১০ ব্যগ পর্যন্ত রক্ত দেয়া লাগে। এছাড়া তার রক্তগ্রুপ জানা নেই। সাথে আগে চিকিৎসা নিয়েছে এমন কোনো ব্যবস্থাপত্রও ছিলো না।

লোহাগাড়া জেলারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক তৈাহিদুল ইসলাম জানান, রাত ১২টার দিকে উপজেলার পদুয়া থেকে মরিয়ম নামে এক প্রসুতি মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে তার স্বজনরা। সাথে সাথে তাকে ভর্তি নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও রক্ত দেয়া হয়েছে। তার রক্ত গ্রুপ রক্ত বি নেগেটিভ। বর্তমানে মোটামুটি সুস্থ্য আছেন তিনি। মরিয়ম বেগম উপজেলার পুটিবিলার গৌড়স্থান এলাকার দিন মজুর মহরম মিয়ার স্ত্রী।

পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জহির উদ্দিন জানান, ‘রাতে আমার কাছে খবর আসে মরিয়মকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার পর পরই রাস্তায় খোলা জায়গায় বাচ্চা প্রসব করেছে। আমি শুনে হতবাক। তড়িঘড়ি করে গিয়ে লোকজন সাথে নিয়ে মহিলাটিকে উদ্ধার করে বেসরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তবে জন্ম নেয়া শিশুটি জন্মের কিছুক্ষনের মধ্যেই মারা গেছে। এটা খবুই অমানবিক। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের এ ধরনের আচরণ মেনে নেয়া যায় না।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হানিফ বলেন, রাতে আমি ছিলাম না। সকালে এসে শুনেছি। এই বিষয়ে ওই সময়কার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন ভালো বলতে পারবেন। তবে চিকিৎসা না দিয়ে বাহিরে বের করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

এই বিষয়ে চানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী নয়া দিগন্তকে বলেন, এধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে বিষয়টি খুবই অমানবিক, আমি খবর নিচ্ছি। অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *