হাসতে নাকি জানে না কেউ কে বলেছে ভাই, এই শোন না কত হাসির খবর বলে যাই। প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক কবি ও লেখক রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের বিখ্যাত কবিতা থেকে নেয়া এই কয়েকটি শব্দ।
রোকনুজ্জামান খান (জন্মঃ ৯ এপ্রিল, ১৯২৫ – মৃত্যুঃ ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৯)। বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক ও সংগঠক ছিলেন। কিন্তু তিনি দাদাভাই নামেই সম্যক পরিচিত ছিলেন। তাঁর জন্ম ফরিদপুর জেলার পাংশা উপজেলায়। বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক ইত্তেফাকের শিশু-কিশোরদের উপযোগী কচিকাঁচার আসর বিভাগের পরিচালক হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন।
আমরা শিক্ষা জীবনে অনেক কবিতা ও প্রবন্ধ পড়েছি। কবিদের লেখার বয়স অসীম। বাস্তবতা যুগের পর যুগ। এই কবিতায় কবি অনেক ধরণের হাসির কথা বলেছেন। আজকে কয়েক ধরণের হাসির সমন্বয়ে একটি বড় হাসির খবর জানাতে চাই।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী তপসিল ঘোষনা করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেই মতে দুই সিটির নির্বাচন হবে ১৫ মে। এরই মধ্যে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে গাজীপুর সিটির নির্বাচন। থমকে গেছে গাজীপুর বাসির ভোট উৎসবের আনন্দ।
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী আপিল করেছেন। আদালত শুনানীর দুটি তারিখ পরিবর্তন করেছেন। এখন আপিল করেছেন নির্বাচন কমিশন। শুনানী হবে আগামী কাল। আর আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলে গেলেন, আদালত আজকে আদেশ দিলে নির্বাচন করা সম্ভব হত। এর অর্থ হল এখন আদালত আদেশ দিলেও নির্বাচন কমিশন গাসিক নির্বাচন ১৫ মে করতে পারবে বলে মনে হয় না। চমৎকার আয়োজন আমাদের হাসির। তাই আমরা এখন হাসছি। অনেক ধরণের হাসি। কেউ মুচকি হাসি, কেউ কান্নাজড়িত হাসি আবার কেউ বা আড়ালে হাসছি। যাই হউক, সবাই হাসছি কিন্তু কেউ কাঁদছি না। কারণ আমাদের কান্না মানায় না। আর কান্নাও আসে না।
তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, যে ৬টি মৌজার জন্য গাসিক নির্বাচন হল না, সে ৬টি মৌজা আমাদের জেলার অন্তর্ক্ত হয়েছে ১৯৯৬ সালে। এরপর থেকে ওই ৬টি মৌজার ভোটাররা গাজীপুরেই ভোট দিচ্ছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ২০১৩ সালেও তারা ভোট দিয়েছেন। আর এ বছর ৪এপ্রিল নির্বাচন কমিশন ওই ৬টি মৌজা নিয়ে গাজীপুর সিটির গেজেট প্রকাশ করে। ৩১ মার্চ ঘোষনা করে তপসিল। আর ৯ এপ্রিল রিটের বাদী সুরুজ চেয়ারম্যান উচ্চ আদালতে রিট মামলা করেন। ১০ এপ্রিল রিট খারিজ হয়ে যায়। আর ৬ মে তিনি আবার রিট করেন ও প্রথম দিনেই নিষেধাজ্ঞা পেয়ে যান। ১০ এপ্রিল থেকে ৫মে পর্যন্ত রিটকারী কোন কাজ করেননি। আর এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নগুলো নিশ্চিত হয়। সুতরাং বলাই যায়, তিনি(রিটকারী) মনোনয়নের জন্য অপেক্ষায় থাকতে পারেন।
ইতোমধ্যে খবর এসেছে, রিটকারী সুরুজ চেয়ারম্যান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত এডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের বিয়াই। চমৎকার হাসির খবর এটি, নিসন্দেহে। তবে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পর আজমত উল্লাহ খানের বিয়াই রিট করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এটাই স্বাভাবিক।
এ ছাড়া সুরুজ চেয়ারম্যান হঠাৎ করেই দীর্ঘ দিনের না পাওয়া ন্যায় বিচার পাওয়াতেও একটি হাসি এসে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেকটি হাসি। আরেকটি ব্যতিক্রমী হাসি হল, রিট আবেদনকারী সম্পর্কে আমাদের উচ্চ আদালতের রায় আছে, আদালতের সামনে তাঁর হাতে ক্লিন হ্যান্ডে বা পরিচ্ছন্ন হাতে আসতে হবে। কিন্তু গাজীপুরের মেয়র নির্বাচন যাঁর রিটের কারণে আটকে গেল, সেই আজহারুল ইসলাম সুরুজ পরিচ্ছন্ন হাতে আসেননি। পারিবারিক ঐতিহ্যগতভাবে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হলেও দুটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি তদন্ত কমিটি দালিলিকভাবে প্রমাণ করেছে, তিনি হাইকোর্টে হলফ করে মিথ্যা বলেছিলেন।
তিনি গাজীপুরের যে ছয়টি মৌজা সাভারের বলে দাবি করে ২০১৫ সালে রিট করেছিলেন, তার একটিতে নিজের ঠিকানা ডোমনাগ উল্লেখ করেছিলেন। ডোমনাগ গাজীপুরের ছয়টি মৌজার মধ্যে পড়েছে। কিন্তু ২০১৭ সালের অক্টোবরের তদন্ত প্রতিবেদন বলেছে, তাঁর বাড়ি ডোমনাগে নয়।
গত রোববার রাতে তাঁর(সুরুজ) কথাবার্তা কিছুটা স্ববিরোধী মনে হয়েছে। যেমন তিনি বলেছেন, ডোমনাগসহ ছয়টি মৌজাবাসীর নাম কখনো গাজীপুরের ভোটার তালিকায় যায়নি। অথচ ১৯৭৮ সালের পরে কখনোই ডোমনাগের তালিকা সাভারভুক্ত হয়নি।
৬০ ছুঁই ছুঁই সুরুজের প্রয়াত পিতা আওয়ামী লীগ করতেন। তিনি যথার্থ গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেছেন যে বীরাঙ্গনাদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে তাঁর পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। তাঁরা কয়েক বিঘা জমি দিয়েছিলেন। সেই জমিতেই পরে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সুতরাং এটাও একটি হাসির নতুন খবর।
সবশেষে, দুই মেয়র প্রার্থী পর্যায়ক্রমে আপিল করায় শুনানী পিছিয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন আপিল করায় আরেকটি হাসির জন্ম হল। ফলে আজ আবার হাসতে হল, যখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার গাজীপুর এসে বলে গেলেন আদালত বললেও ১৫ মে নির্বাচন করা সম্ভব নাও হতে পারে। এটাও কঠিন হাসির খবর। যে কমিশন তাৎক্ষনিক আপিল না করে বরং নির্বাচনী কার্যক্রম কাগজপত্র হাতে পাওয়ার আগেই বন্ধ করে দিয়েছে, সেই নির্বাচন কমিশন এখন আপিল করবে। আবার আদালত বললেও ১৫ মে নির্বাচন করা যাবে না, আর সেটা বলে গেলেন গাজীপুরে এসে। হাসি আর হাসি। চমৎকার হাসির খবর এটি।
যাই হউক, গাজীপুরবাসীর কপালে হাসি আছে এটা সৌভাগ্যের বিষয়। তবে এই হাসি যেন বড় ধরণের কোন হাসির জন্ম না দেয়, সে প্রত্যাশাও আমাদের। কারণ বেশী হাসলে কাঁদতে হয় এটা প্রবাদে আছে। জানিনা, আমরা এখন কোন হাসি হাসছি।