ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমরা চাই স্থায়ী সমাধান। তাদের সাহায্য করাটা এ সমস্যার সমাধান নয়। সাহায্যের চেয়ে বেশি প্রয়োজন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে স্ব-সম্মানে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই সমাধান। এ ব্যাপারে আমরা ভারত সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য ভারতের ৩৭৩ টন ত্রাণসামগ্রী গ্রহণকালে তিনি এসব কথা বলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীর হাতে ত্রাণ হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ্ কামাল, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম, চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, বন্দরের সচিব ওমর ফারুক, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল প্রমুখ।
এর আগে গত ৫ মে ভারতের বিশাখাপত্তম বন্দর থেকে ত্রাণ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয় ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ ‘ঐরাবত’। গত মঙ্গলবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের ২ নং জেটিতে পৌঁছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য ভারতের পক্ষে দ্বিতীয় দফায় পাঠানো ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে আছে, ৫০ হাজার রেইনকোট, ৫০ হাজার জোড়া গামবুট, ৪৫ টন শিশুখাদ্য, ১০০ টন গুঁড়োদুধ ও ১০০ টন শুঁটকি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম দফায় ৯৮১ মেট্রিক টন ত্রাণ সহায়তা দেয় ভারত। এর মধ্যে ছিল চাল, চিনি, লবণ, তেল, চা, নুডুলস, বিস্কুট, মশারি। তাছাড়া খুব শীঘ্রই রোহিঙ্গাদের জন্য ১ মিলিয়ন লিটার কেরোসিন ও ২০ হাজার চুলা দেবে ভারত। শিগগির চালানটি বাংলাদেশে আসবে বলে জানা যায়।
ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে ১১ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন এতিম শিশু শনাক্ত, ৩০টি ক্যাম্প ও ২ লাখ ঘর নির্মাণ, ২৫ হাজার পরিবারকে পাহাড়ের ঢাল থেকে সরিয়ে নেওয়া, ৯ কিলোমিটার এলাকা বিদ্যুতায়ন, ১৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও ১০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। অন্যদিকে, পাহাড়ের ঢালুতে বাস করা ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার পরিবার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ মাসের মধ্যে আরো ২০-২৫ হাজার পরিবারকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হবো।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ নাগরিক বাংলাদেশে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ অত্যন্ত কষ্ট করে তাদের বুকে টেনে নিয়ে আশ্রয় দিয়েছেন। ভারতসহ অসংখ্য দেশ মানবিক সাহায্য করেছেন। সব দেশকে অভিনন্দন জানাই। ভারত সরকার বিশেষ করে এখানে উপস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সবচেয়ে বড় সমস্যা জ্বালানি সংকট। সেখানকার পাহাড়ে এখন গাছপালা নেই বললেই চলে। প্রথমে পাহাড়ের ডাল-পালা, এরপর গাছ কাটা, এখন গাছের গোড়া পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে রান্নার জন্য। বলতে গেলে পাহাড়গুলো এখন গাছশূন্য। ভারত সরকার ২৫ হাজার স্টোভ আর ১ মিলিয়ন লিটার কেরোসিন তেল ত্রাণ হিসেবে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে। আমাদের এ দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি বিশ্বাস, বন্ধুত্ব ও শহীদের আত্মত্যাগ। যা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। বাংলাদেশে যে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলায় আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আজ ৩৭৩ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছি। খুব তাড়াতাড়ি ১ মিলিয়ন লিটার কেরোসিন তেল ও ২০ হাজার রান্নার চুলা নিয়ে আসবে আরও একটি জাহাজ। বর্ষার শুরুতে নারী ও শিশুদের কথা ভেবে এসব সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।’
হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা জানি এত বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের সহায়তা করতে বাংলাদেশের ভূমিকা অসাধারণ। আমরা মনে করি, এ কাজ আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন পাবার যোগ্য। জরুরি সেবা দিতে বাংলাদেশ যে ব্যবস্থা নিয়েছে আমরা তার প্রশংসা করছি। বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে আমরা আশা করছি আমাদের এ সহযোগিতা কিছুটা হলেও আপনাদের কাজে লাগবে।’