পাঁচ ঘণ্টা পর হাসান সরকারের বাড়ি থেকে পুলিশ প্রত্যাহার

Slider রাজনীতি

316363_119

প্রায় পাঁচ ঘণ্টা টঙ্গী থানায় আটকে রাখার পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল-নোমানকে রাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। একই সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হাসান সরকারের বাড়ি থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ব্যক্তিগত সহকারী কিবরিয়া খান জনি জানান, রোববার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ২০ দলীয় জোটের মেয়রপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের বাড়ি প্রায় ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকারসহ ১৫-২০ জন নেতাকর্মী হাসান সরকারের বাড়ির ভেতর অবস্থান করছিলেন। এসময় পুলিশ বিকেল ৫টায় হাসান সরকারের বাড়ির সামনে থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল-নোমানসহ ১৫ জনকে আটক করে। পুলিশ সদস্যরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসান সরকারের বাড়ি সামনে থেকে সরে যায়। রাত পৌনে ১০টায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল-নোমানকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।

আব্দুল্লাহ আল নোমানকে ছেড়ে দেয়ার সময় পুলিশ কর্মকর্তারা হাসান সরকারের বাড়িতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন এবং তার বাড়ির ভেতর অবস্থানরত নেতাকর্মীদের চলে যেতে বলেন। অবশেষে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাত পৌনে ১০টায় বরকত উল্লাহ বুলু ও ফজলুল হক মিলনসহ নেতাকর্মীরা হাসান সরকারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হাসান সরকারের বাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখার কারণ সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

হাসান সরকারের বাড়ির সামনে জয় বাংলা স্লোগান ঃ নির্বাচন স্থগিতের খবরে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বাড়ির সামনে যখন নেতাকর্মীদের কান্নার রুল চলছিল ঠিক সেই মূহুর্তে ‘জয় বাংলা; জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে আনন্দ মিছিল বের করে আওয়ামীলীগ কর্মীরা। রোববার মাগরিবের নামাজের সময় ১০-১২ জনের মিছিলটি হাসান সরকারের বাড়ির পাশে পাইলট স্কুল মাঠ থেকে বের হয়। এর পর মিছিলটি পূর্ব দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশের ভেতর দিয়ে মহাসড়কের দিকে চলে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী তফশিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা ছিল। এ নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণাও বেশ জমে উঠেছিল। রবিবার সকাল থেকে প্রার্থীরা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু সীমানা জটিলতা নিয়ে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে ভোট গ্রহণের তারিখের মাত্র আটদিন আগে রোববার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এ আদেশের পর নির্বাচনী সকল প্রচার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। নির্বাচন স্থগিতের সংবাদ পেয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীরাসহ সকল প্রার্থী তাদের গণসংযোগ কার্যক্রম বন্ধ রেখে ফিরে আসে। এলাকায় এলাকায় মাইকিংও বন্ধ হয়ে যায়।

উচ্চ আদালতের দেয়া আদেশে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন স্থগিতের খবর পেয়ে দুপুর হতে ১৪ দলীয় জোটের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের (নৌকা) ছয়দানা হাজীর পুকুর এলাকার বাসার সামনে এবং ২০ দলীয় জোটের নেতা কর্মী সমর্থকরা বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার বাসার সামনে জড়ো হতে থাকে।

দুপুরের পর নগরীর টঙ্গীস্থ নিজ বাড়ীতে নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হঠাৎ করে উচ্চ আদালতের একটি রায় গাজীপুরবাসীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। আমার জীবনের সর্বস্ব দিয়ে হলেও এ গাজীপুরবাসীর মনের কথা, জনগণ যাতে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তার জন্য আইনী লড়াই, মাঠের লড়াই, রাজনীতির লড়াই জনগণের পক্ষে এ লড়াই করে যাব। এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিকেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গাজীপুর শহরস্থ বিএনপি’র জেলা কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিতের ব্যাপারে মন্তব্য করে বলেন, এটা সরকারের ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্র করে এ নির্বাচন বেশি দিন স্থগিত রাখা যাবে না। আমরা আদালতে যাব। আইনী লড়াইয়েও আমরা বিজয়ী হব, জনগণের সমর্থনেও বিজয়ী হব। আমাদের নেতা-কর্মীদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ঐক্য ছাড়া আমাদের তো আর কোন পুঁজি নেই। আমাদের আবেগকে বেগে পরিনত করতে হবে।

তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে আরো বলেন, তারা মানুষের রায় ছিনিয়ে নিতে পারবে না। তাই মানুষকে নির্বাচন থেকে দুরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এটা নোংরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা, নজির স্থাপন করেছেন জাতির সামনে। আমরা ধিক্কার জানাই, নিন্দা জানাই, ঘৃণা জানাই। আমরা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করি। আইনী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এ নির্বাচন যাতে আবার অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য আমরা আদালতে লড়াই করব। সমস্ত অস্ত্র, সমস্ত গোলাবারুদ, সমস্ত অত্যাচার, নীল নকশা, নির্যাতনের সমস্ত হাতিয়ার সরকার কুক্ষিগত করেছে । সেই হাতিয়ার প্রতিরোধ করার উপায় হচ্ছে নেতা-কর্মীদের সুদৃঢ় ঐক্য, ইস্পাত কঠিণ ঐক্য। সেই ঐক্যকে ধারণ করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। নির্বাচনের তারিখ পুনরায় ঘোষনা না করা পর্যন্ত আমরা নিন্দা, প্রতিবাদ আমরা অব্যাহত রাখব।

এসময় বিএনপির সহ-সাংগঠণিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক এমপি কে এম সেলিম রেজা হাবিব, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহবুবুল হক গোলাপ, পৌর বিএনপির সভাপতি মীর হালিমুজ্জামান ননী, জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান এলিচ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী ডা.মাজহারুল আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, বিএনপি তথা বিশ দলীয় জোটের প্রধান ইস্যু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা সাড়ে এগারো লক্ষ সচেতন ভোটারের নিকট গিয়ে ভোট চেয়েছি। জনগণ নজিরবিহীন সমর্থন দিয়েছেন। যার বহিঃপ্রকাশ হতো ১৫ মে। প্রমান হলো গাজীপুরবাসী অবিলম্বে- দেশনেত্রীর মুক্তি চায়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের স্থগিতাদেশে এটাই প্রমান হলো যে, জনগণের রায় পেয়েও যেমন বিএনপির মেয়র জনসেবা করার সুযোগ পায় নি, ঠিক তেমনই এবার বিএনপির মেয়রপ্রার্থীকে নির্বাচনের পূর্বেই জনসেবা থেকে বঞ্চিত করা হলো।

অপরদিকে ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) নির্বাচন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, জনগণ ভোট চায়। আমরা নির্বাচনমূখী। আমরা আইনের সহযোগীতা নিয়েই নির্বাচন করবো।

এর আগে নির্বাচন স্থগিতাদেশের খবর পেয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ কার্যক্রম বন্ধ করে গাজীপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তিনি সকালে বাসন সড়ক এলাকায় ম্যাট্রিক্স কারখানায় বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই ও বিকেএমইএ এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী প্রিন্সিপাল মুহাম্মাদ নাসির উদ্দীন হাইকোর্টের রায়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ ও ক্ষতিপুরণ দাবি করেছেন ।

তিনি বলেন, সীমানা জটিলতা নিরসন ছাড়া নির্বাচনের আয়োজন করা নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার সু-স্পষ্ট প্রমাণ। মেরুদন্ডহীন এই তল্পিবাহক কমিশন ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠভাবে আয়োজন করতে পারবে না। তাই তিনি এই নির্বাচন কমিশনের আশু পদত্যাগ কামনা করেনএ বং নির্বাচনে অংশ নিয়ে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপুরণ দাবি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *