আইনী জটিলতায় চার বছরের বেশি সময় হাসপাতালের হিমঘরে থাকা ধর্মান্তরিত হোসনে আরার (নীপা রানী) লাশ শুক্রবার ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী দাফন করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের১নং ওয়ার্ড কাজীপাড়া কবরস্থানে জানাযার নামাজ শেষে স্বামীর কবরের পার্শ্বে তার লাশ দাফন করা হয়।
জানাযার নামাজ পড়ান ইমাম মোঃ রবিউল ইসলাম। ১২ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ ধর্মান্তরিত নিপার লাশ মুসলিম শরীয়ত মোতাবেক দাফনের নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশের কপি জেলা প্রশাসকের হাতে পৌছলে শুক্রবার লাশ দাফন করা হয়।
আদালতের নির্দেশে দাফনের জন্য লাশ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
এর আগে আজ শুক্রবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘড় থেকে পুলিশি পাহারায় দুপুরে নিপা রাণীর লাশ উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব-বোড়াগাড়ী কাজীপাড়া গ্রামে তার শ্বশুর সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামের বাড়ীতে আনা হয়। এসময় সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোছাঃ উম্মে ফাতিমা, থানা অফিসার ইনচার্জ মোকছেদ আলী,ওসি(তদন্ত) ইব্রাহীম খলিল উপস্থিতিতে থেকে লাশ তার স্বামী হুমায়ুন কবির লাজুর কবরের পাশে দাফন করা হয়।
এর আগে নিপা রাণীর লাশ সেখানে পৌছলে তা এক নজর দেখার জন্য হাজারো উৎসুক জনতা সেখানে ভীড় জমায়। বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে কাউকে লাশ দেখতে না দেয়ায় তারা হতাশ হয়ে ফিরে যান। এদিকে লাশ দাফনের পুর্বে হোসনে আরার পরিবারকে লাশ দেখানোর আদালতের নির্দেশ থাকলেও তারা সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
মামলার বিবরণে যানা যায়, নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে নিপা রাণী রায়ের সাথে পার্শ্ববর্তী বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন কবির লাজুর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর তারা দু’জন নীলফামারী নোটারি পাবলিকে এফিডেভিটের মাধ্যমে ২লক্ষ ১ হাজার ৫শত ১টাকা দেন মোহরে বিয়ের করেন। এর আগে নিপারানী ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। সেখানে নিপা রানীর নতুন নাম দেয়া হয় হোসনে আরা বেগম (লাইজু)।
এদিকে ২০১৩ সালে ২৮ অক্টোবর নিপার বাবা অক্ষয় কুমার বাদী হয়ে আদালতে হুমায়ুন কবির লাইজু ও তার পবিারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় লাইজুকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছিল। সে সময় বিয়ের স্বপক্ষে কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দি দেয় নিপা। ফলে আদালত অপহরণ মামলাটি খারিজ করে দেন।
এরপর মেয়ের বাবা মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দাবি করে আপিল করে। তখন আদালত আবেদন আমলে নিয়ে মেয়েটিকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে দেয়। নিপাকে সেফ হোমে রেখে ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি হুমায়ুন কবির লাজু রাজশাহী থেকে নিপার বাবার সাথে ট্রেনে বাড়ী ফেরার সময় অজ্ঞাত কারনে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিক্যেল হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
জানাজার জন্য প্রস্তুতি
লাশ নিয়ে আসা হয় ডোমার থানায়। ময়না তদন্তের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় জেগে উঠে লাইজু। তড়িঘড়ি করে তাকে স্থানীয় বোড়াগাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাকে দেখতে আশার পথে নিপাকে তার বাবা চালাকি করে নিজ বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখেন। অবশেষে স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে ২০১৪ সালের ১০ মার্চ নিপা বিষপানে আত্মহত্যা করে।
এর পর লাশের সৎকারের দাবীতে নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী আদালতে আবেদন করেন শ্বশুর জহুরুল ইসলাম ও অপরদিকে মেয়ের বাবা অক্ষয় কুমার।
এ অবস্থায় ৪ বছরের বেশি সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে থাকে নিপা রাণীর লাশ। দীর্ঘদিন আইনী লড়াই শেষে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল নিপার লাশ ইসলামী শরিয়া মতে দাফনের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।