জোটের বাইরের সমমনা দলগুলোকে কাছে টানছে বিএনপি

Slider রাজনীতি

279910_195

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ও সমন্বিত স্বার্থের কথা চিন্তা করে দীর্ঘ দিন ধরেই সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সাথে নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে নানা কার্যক্রমও অব্যাহত রেখেছে দলটি। বিশ দলীয় জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেও এ প্রক্রিয়ার কথা একাধিকবার তার বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বারবার বলে আসছেন জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা। বিশ দলীয় জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকেও একই প্ল্যাটফর্মে আনার কথা জোর দিয়ে বলছেন তিনি। সব রাজনৈতিক দল ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। গতকালও তিনি এক সভায় এই আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা একটি বিষয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে বিজয় আমাদের নিশ্চিত। শিগগিরই বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ দিনের এই প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হতে চলেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে ‘আইনের শাসন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজ সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শামসুল হক চৌধুরী হলে এই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ আইনজীবী গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। সভায় সভাপতিত্ব করবেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন। এর বাইরে সভায় বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, বিশিষ্ট আইনবিদ ড. শাহদীন মালিক, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অনেকেই উপস্থিত থাকবেন।

এর আগে গত ২ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তার খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও তাকে সেখানে দেখতে গিয়েছিলেন। গত ২০ এপ্রিল মির্জা ফখরুলের পক্ষে প্রবীণ আইনবিদ ড. কামাল হোসেনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়। তার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিবের পক্ষে ফুলের তোড়া নিয়ে ড. কামালের বাসায় যান বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও দলের চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান। সেসময় কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার খবর শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ড. কামাল হোসেন। তারও আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের বিষয়ে পরামর্শ করতে মতিঝিলের টয়োটা টাওয়ারে ড. কামাল হোসেনের ল’ চেম্বারে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার আবদুর রেজাক খান, আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন আইনজীবী। এ ছাড়া সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তির সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ রেখে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে কাজ করছে বিএনপি।

এসব ঘটনাকে আগামীতে বিএনপির ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার’ অগ্রগতির অংশ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষ চায় আইনের শাসন ও গণতন্ত্র। আমরা একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছি। সেখানে ড. কামাল হোসেন প্রধান অতিথি থাকবেন। আরো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বরেণ্য ব্যক্তিরা অংশ নেবেন। বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার লক্ষ্যে এ আলোচনা সভা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই সবাইকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আইনের শাসনের জন্য এক কাতারে দেখতে চাই। এটা হলে সবারই লাভ।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়েছে। সেখানে ড. কামাল হোসেন প্রধান অতিথি থাকবেন। সে জন্যই যাবো। আর কে আসছে তা জানি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়তে হলে তো সব ধরনের লোক লাগে। সেখানে (সভায়) তো সবাই থাকবে না।

এ দিকে গতকাল এক সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে হবে। এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে কোনোমতেই মুক্তি পাবেন না, যদি না জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি। সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটাই বাংলাদেশের ইতিহাস। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে পারি তাহলে বিজয় নিশ্চিত। সুতরাং আবারো আহ্বান জানাই একটি বিষয়কে সামনে রেখে এই আন্দোলন ও সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তা হচ্ছে গণতন্ত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *