আল-আমিন আহমেদ সালমান,সুনামগঞ্জ :-সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় একটি সেতুর নির্মাণকাজে রডের সঙ্গে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে।
ঐ এলাকার বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও-হাসকুঁড়ি সড়কে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ভুঁইয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘সেতুতে রডের সঙ্গে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগ সত্য নয়। বর্ষার সময় কাজ করায় সেতুর সংযোগ সড়কের এক পাশে যে গাইড দেয়াল দেওয়া হয়, সেখানে শাটারিং আটকাতে বাঁশের কিছু অংশ পাইপের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো লম্বায় ১০ ইঞ্চি মাপের। এই বাঁশের অংশ আড়াআড়িভাবে দেওয়া। সেতুর খাড়া দেয়ালে কখনো আড়াআড়িভাবে রড ব্যবহৃত হয় না। এখন বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর নির্মাণকাজের সময়ই তারা পিআইওকে সেতুর নিম্নমানের কাজ এবং ঢালাইয়ে রড়ের সঙ্গে সেতুর বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামীণ রাস্তায় সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ওই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৬ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স স্মার্ট এন্টারপ্রাইজ এটি নির্মাণ করেছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর সংযোগ সড়কের ডান পাশের একটি দেয়ালে আড়াআড়িভাবে কিছু বাঁশের টুকরো বেরিয়ে এসেছে। ওই দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁশের টুকরোগুলো অনেকটা পাইপের মতো করে দেওয়া। তখন সেখানে থাকা পিআইও সাহাদৎ হোসেন ভুঁইয়াকে এসব দেখালে তিনি বলেন, এটি আড়াআড়িভাবে দেওয়া। লম্বায় ১০ ইঞ্চি। এটা রড হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি। এটি দেওয়া হয়েছিল শাটারিং আটকানোর জন্য। তবে শাটারিং আটকানোর জন্য প্লাস্টিকের পাইপ ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিকের পাইপের বদলে বাঁশ ব্যবহার করা উচিত হয়নি।’
বীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. রফিজ আলী বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে সেতুর কাজ হয়েছে। শুরু থেকেই ঠিকাদার নানাভাবে কাজে অনিয়ম করেছেন। নিম্নমানের বালু-পাথর ব্যবহার করেছেন। ঢালাইয়ের সময় রডের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে সেতুর দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। বীরগাঁও গ্রামের আরেক বাসিন্দা রাজনুর মিয়া বলেন, ‘যখন সেতুর কাজ হয় তখন বৃষ্টি ছিল। ঠিকাদারের লোকজন যেনতেনভাবে কাজ শেষ করে চলে যায়। আমরা বাধা দিলেও কোনো কাজ হয়নি।’ মির্জা হোসেন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা অনেকবার কাজে বাধা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শোনেনি।’
পিআইও বলেছেন, ‘সেতুর যে অংশে বাঁশ বেরিয়ে এসেছে, সেই স্থানটি আগামীকাল (রোববার) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ভাঙা হবে। তখন প্রমাণিত হবে, সেতুতে রডের সঙ্গে বাঁশ ব্যবহৃত হয়েছে কি না।’ এলাকার মানুষের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এসব সত্য নয়, সেতুর কাজ করার সময় স্থানীয় কিছু লোক নানাভাবে সুবিধা নিতে চেয়েছিল। তারাই এখন এসব বলছে।’
পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নূর কালাম বলেন, ‘সেতুর কাজে নানাভাবে অনিয়ম হয়েছে। এখন বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমরা তখন সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
সেতুর কাজের ঠিকাদার মোজাহিদ মিয়া বলেন, ‘ঢালাইয়ে ভেতরে একটি বাঁশও দেওয়া হয়নি। বর্ষায় যখন কাজ হয়, তখন সেতুর এক পাশের দেয়াল ঢালাই দেওয়ার সময় শাটারিং আটকানোর জন্য দু-একটি বাঁশের টুকরা ব্যবহার করা হয়েছিল। এসব পরে বের করা সম্ভব হয়নি। সেতুর যে অংশ নিয়ে কথা উঠেছে, সে অংশ ভেঙে দেখলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। যদি রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহৃত হয়, আমি তার দায় নেব।’