নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট সম্পুর্ন আলদা জিনিস। তিনি (তারেক রহমান) যদি নিজ থেকে বলেন, আমি নাগরিকত্ব সারেন্ডার করেছি সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু পাসপোর্ট দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন। আবার দেশের মধ্যেও অনেক কাজে লাগে। পাসপোর্টের সাথে নাগরিকত্বের কোন সম্পর্ক নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইমিগ্রেশন এন্ড পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মাসুদ রেজওয়ান।
তারেকের পাসপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়ে ডিজি বলেন, তারেক রহমান ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তখন তার পাসপোর্ট ছিল হাতে লেখা, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ছিল না। ২০১০ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৪ সালে লন্ডন হাইকমিশনে পাসপোর্ট জমা দেন। সেই থেকে তিনি নতুন পাসপোর্টের জন্য কোনো আবেদন করেননি। পাসপোর্ট জমা দেয়ার সময় তিনি কারণ হিসেবে কি বলেছেন এমন প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, যতটুকু জানি তখন তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের পর্যন্ত সেটা আসেনি। আরেক প্রশ্নে ডিজি বলেন, তিনি (তারেক) নাগরিকত্ব চান না এমন কোন তথ্য নেই।
এখন নতুন পাসপোর্ট নিতে হলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। কিন্তু তারেকের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। এটা নিতে হলে অবশ্যই দেশে আসতে হবে। পাসপোর্ট না থাকলেও দেশে ফিরতে তার কোন সমস্যা নেই জানিয়ে ডিজি বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ভ্রমণ পাস সংগ্রহ করে তিনি যে কোন সময় দেশে আসতে পারেন। যদি তিনি স্বেচ্ছায় ফিরতে চান। জোর করে দেওয়া হবে না। আর না চাইলে সেটা তার ব্যাপার। তবে সরকার তাকে আনতে চাইলে কীভাবে আনবে এটা সরকারের ও আইনের ব্যাপার।
২০০৮ সালে সপরিবারে লন্ডন যাওয়ার পর আর ফেরেননি তারেক। সেখানে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের আদালতে দু’টি মামলায় তার সাত ও দশ বছরের সাজার রায় হয়। যে পাসপোর্ট নিয়ে তারেক লন্ডন গিয়েছিলেন, তার মেয়াদ ২০১৩ সালে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত ২৩ এপ্রিল বলেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তার পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে ‘সারেন্ডার’ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারেক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন বলেই তিনি মনে করেন।
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪ এপিল যে সংবাদ সম্মেলন করেন, সেখানে প্রথমবারের মত দলটি স্বীকার করে নেয় যে, তারেক তার পাসপোর্ট ব্রিটিশ হোম অফিসে জমা দিয়েছেন রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য। ফখরুলের দাবি, তারেক নাগরিকত্ব ত্যাগ করেননি।
দন্ডিত ও পলাতক আসামি হওয়ায় আপাতত নতুন কোনো পাসপোর্ট তারেক পাবেন না। এই অবস্থায় নতুন পাসপোর্টের আবেদন করলে তারেক কেন তা পাবেন না, তার ব্যাখ্যায় ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট আদেশ থেকে বিধি উদ্ধৃত করেন পাসপোর্ট ডিজি। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট আদেশ অনুযায়ী, আদালতে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে নূন্যতম দুই বছরের সাজা হলে পাঁচ বছরের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। একইভাবে কেউ যদি দেশের কোনো আদালতে কেনো ফৌজদারি মামলায় হাজিরা এড়ান বা এড়ানোর চেষ্টায় থাকেন তাকেও পাসপোর্ট দেওয়া যায় না। তিনি দেশে এসে সিস্টেম অনুযায়ী আবেদন না করে যদি লন্ডন থেকে পাসপোর্টের আবেদন করেন, তিনি তা পাবেন না।