ঢাকা: ভারত সীমান্তে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক বাংলাদেশী নারীকে মারাত্মক হয়রানি করেছে পেট্রাপোলের একজন অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তা। ওই নারীর নাম অর্পিতা। তার বিয়ে হয়েছে কলকাতার আনন্দ দাশগুপ্তের সঙ্গে। শনিবার তিনি পেট্রাপোলে হাজির হলে তাকে উত্তপ্ত রোদের ভিতর টানা আট ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শুধু তা-ই নয়। এ সময় তাকে নানাভাবে হয়রান ও নির্যাতন করা হয়।
অর্পিতার পাসপোর্ট অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য তাকে ভারতে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না ওই কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে অর্পিতার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আতঙ্ক দেখা দেয় যে, এতে তার গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়ে একটি মামলা করেছেন অর্পিতার স্বামী আনন্দ দাশগুপ্ত। তাতে তিনি বলেছেন, অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা তার স্ত্রীর কাছে ঘুষ দাবি করেছিলেন। তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তার স্ত্রীকে হয়রান করা হয়েছে। ওদিকে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা বিষয়টিতে খোঁজ নিয়ে দেখবেন। ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন আনন্দ দাশগুপ্ত ও অর্পিতা। তারা বেড়ানো শেষে শুক্রবার রাত ১০টায় ঢাকা ছাড়েন। অতিক্রম করেন বেনাপোল সীমান্ত। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১০ মিনিটে পৌঁছে যান পেট্রাপোল অভিবাসন সেন্টারে। আনন্দ তার মামলায় বলেছেন, প্রথমেই অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন যে অর্পিতার পাসপোর্ট ভুয়া। তারপর তারা বলেন, এটা চুরি করে আনা হয়েছে। এরপর অভিযোগ করেন এটা নষ্ট হয়ে গেছে। এর চার ঘন্টা পরে অর্পিতার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তখন আনন্দ তাকে ২০০ মিটার নোম্যান্স ল্যান্ড ক্রস করে ফেরত নিয়ে যান বেনাপোলে। এক রকম অচেতনই হয়ে পড়েন অর্পিতা। তাকে রেখে আনন্দ দাশগুপ্ত ফিরে যান অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তাদের কাছে। তখন সময় দুপুর প্রায় সাড়ে বারটা। তিনি অনুরোধ করেন তাদের নানাভাবে। কিন্তু তাকেও অপদস্ত করা হয়। এমন কি অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা তাদের পাসপোর্ট মেঝেতে ছুড়ে ফেলেন। মামলায় বলা হয়, দুপুর একটার দিকে আনন্দকে অফিসের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে সিসিটিভির আওতায় না আসে। তার কাছে ৪০ হাজার রুপি ঘুষ চাওয়া হয়। এ নিয়ে স্ত্রী অর্পিতার কাছে ফিরে যান আনন্দ। তিনি তার সঙ্গে অর্থের বিষয়টি আলোচনা করেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে এত অর্থ না থাকায় তারা তা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান। সময় গড়াতে থাকে। তখন ঘড়ির কাঁটায় আড়াইটা বাজে। অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তা অর্পিতার পাসপোর্টে ভারতে প্রবেশের স্ট্যাম্প মারতে অস্বীকৃতি জানান। আনন্দ বলেন, সমস্যাটা শুরু হয় তখন যখন আমি ওই কর্মকর্তার একজন সহকারী দফাদারের কাছে তার ঠিকানা চাই। ঠিক এমন সময় অর্পিতার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আনন্দ বলেন, এ সময় ওই কর্মকর্তার কাছে আমি করজোরে াআবেদন করি। বলি, আমার স্ত্রীর জরুরি চিকিৎসা দরকার। কিন্তু ওই কর্মকর্তা আমার কথায় পাত্তাই দিলেন না। আমাকে অবমাননা করলেন। তিনি আমার সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করলেন। অর্পিতা বলেন, ওই সময় আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। অথচ তারা আমাকে একটি চেয়ারও দেয় নি বসতে। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল আমার পোশাক। যদি আমার গর্ভস্থ শিশুর কোনো ক্ষতি হয় তাহলে কে তার দায় নেবে?
স্থানীয় সময় তখন বিকাল ৩টা। পেট্রাপোল পুলিশ স্টেশনের ওসি সিদ্ধার্থনাথ মন্ডল ওই দম্পতির বিপর্যয়ের কথা শুনতে পান। তিনি দ্রুত ছুটে যান অভিবাসন কেন্দ্রে। তিনি দ্রুত অর্পিতাকে জরুরি চিকিৎসার জন্য পাঠান বনগাঁ হাসপাতালে। তিনি বলেন, ওই নারীর শরীর থেকে যেভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তা দেখে আমি হতাশ হয়েছি। এটা তো জীবন-মৃত্যু প্রশ্ন। তাই আমি তাদেরকে আমার গাড়িতে তুলে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। পুরো বিষয়টি আমার সিনিয়র কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি আমি। ওই নারীর স্বামী আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তার ভিত্তিতে একটি মামলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে। ওদিকে অর্পিতাকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা বলেছেন অর্পিতার যে অবস্থা তাতে তাকে তিন দিনের আগে ছাড় দেয়া যাবে না। আনন্দ দাশগুপ্ত বলেন, ওই হাসপাতালে স্বস্তি পাচ্ছিল না অর্পিতা। তাই আমি একটি রিস্ক বন্ডে স্বাক্ষর করি। তখন ওই ওসি একটি এসি এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। তিনি আমাদেরকে পরিবহনের জন্য কোনো অর্থ নেন নি। ওই ওসির কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তার সাহায্য ছাড়া হয়তো আমার স্ত্রী মারাই যেতো। আনন্দ বলেন, ঘন ঘন আমরা বাংলাদেশে যাই। বেশির ভাগই যাই বিমানপথে। সেক্ষেত্রে একই পাসপোর্ট ব্যবহার করি। তবে এমন সমস্যা কখনো মুখোমুখি হই নি।