ছোট্র সেঁজুতির দাদুর নাক নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাকের মতো। সেজন্য মনে মনে শেখ হাসিনাকেও দাদুরন মতো জানতো সে। কিন্তু সম্প্রতি দাদু মারা যাওয়ার পর সেঁজুতির খুব মন খারাপ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টিভিতে বা ছবিতে দেখলেই তার দাদুর কথা মনে পড়ছে। আর এই দাদুকে (প্রধানমন্ত্রী) সরাসরি দেখার জন্য নিজ বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানিয়ে একটি চিঠি পোস্ট করে সেঁজুতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট্র এই সোনামনির আবেগতাড়িত সেই চিঠি পড়ে জবাবও দিয়েছেন। তবে ব্যস্ততার কারণে তার বাড়ী যাওয়া সম্ভব না হলেও খামে ভরে একটি ছবি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নিজের স্বাক্ষরে পাঠানো এই চিঠি পেয়ে শুধু সেঁজুতিই নয়, তার পুরো পরিবার আনন্দে আত্মহারা।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া এইজিজিএস স্মৃতি বিদ্যায়তনের সহকারী শিক্ষক সৈয়দ রফিকুল ইসলামের মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সৈয়দা রওনক জাহান সেঁজুতি। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোট। কিছুদিন আগে ছোট্ট সেঁজুতির দাদু মারা যায়। দাদুকে হারিয়ে ভীষণ মন খারাপ তার। অবশ্য সেঁজুতি তার হারানো দাদীকে খুঁজে পায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে। তাই মনের কথা খুলে বলতে সেঁজুতি গত মাসের ২৫ তারিখ প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি লিখে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেঁজুতির চিঠি পাওয়ার পর তার জবাবও দেন চলতি মাসের ১২ তারিখ।
রোববার সেই চিঠি হাতে পায় সেঁজুতি। সেঁজুতি ও প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল। চিঠি দুটির সত্যতা প্রধানমন্ত্রীর প্রেসউইং সূত্রেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সেঁজুতি তার চিঠিতে লিখে, ‘দাদুকে হারিয়ে আমি ভালো নেই। তোমার মুখ আমার দাদুর মুখের মতো। বিশেষ করে তোমার নাক আমার দাদুর নাকের মত। তাই আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে টিভিতে দেখলে আমার দাদুর কথা মনে পড়ে।’ সেঁজুতি প্রধানমন্ত্রীকে তার বাসায় যাওয়ারও দাওয়াত দেন চিঠিতে।
সেঁজুতির চিঠি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী খুব যত্ন করে চিঠির উত্তর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমার লেখা চিঠি পেয়েছি। আমার স্নেহ ও শুভেচ্ছা গ্রহণ কর। আশা করি তুমি বাবা-মা, বন্ধুদের নিয়ে খুব ভালো আছো। তোমার চিঠিটি আমি কয়েকবার পড়েছি। তোমার দাদুর জন্য দোয়া করেছি। তোমার দাদুকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বেহেশত নসীব করুন। তুমি মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করবে এবং স্কুলে যাবে। বাবা-মার কথা শুনবে এবং বড় হয়ে দেশের সেবা করবে। তোমার জন্য আমার একটা ছবি পাঠালাম। অনেক অনেক দোয়া আর আদর রইল।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেঁজুতির বাবা রফিকুল ইসলাম চিঠির সত্যতা স্বীকার গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘মেয়েটি চিঠি লিখে কয়েকদিন আমাকে পোস্ট করতে বলেছিল। কিন্তু আমি তা আমলে নেইনি। ভাবছিলাম প্রধানমন্ত্রীর এতো সময় কোথায় ওর চিঠি পড়ার।
সেঁজুতির কাছে লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠি
এ ছাড়া এ চিঠি আদৌ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে কীনা। তবে বাসায় ফিরলেই মেয়েটির পীড়াপীড়ি শুরু হয়, ‘বাবা চিঠিটা পোস্ট করোনা।’ একরকম বিরক্ত হয়ে তা পোস্ট করি। খুব অবাক হয়েছি যে কয়দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি ফোন পেয়ে। সেখান থেকে একজন কর্মকর্তা বললেন, সেঁজুতির চিঠি প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার পড়েছেন এবং তার জবাবও লিখেছেন। কিন্তু ঠিকিানা পুরোপুরি না থাকলেতো চিঠি যাবেনা।
সেজন্য পুরো ঠিকানা এসএমএস করতে বলা হলে আমি এসএমএস করি। অবশেষে রোববার সকালে এই চিঠি পেয়ে সাবাই অবাক। আর চিঠিটি সেঁজুতি নিজেই গ্রহণ করেছে। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবিও উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। মেয়েটি বারবার সেই ছবি দেখছে।