ঢাকা:টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে এ বছরের তালিকাটি প্রকাশ করে বিখ্যাত এই মার্কিন ম্যাগাজিন। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়েছেন লিডার্স ক্যাটাগরিতে। প্রতিবারের মতো এবার ক্রমানুসারে তালিকা দেয়া হয় নি। পাঁচটি ক্যাটাগরিতে প্রভাবশালীদের নাম বিন্যাস করা হয়েছে। এগুলো হলো- পাইওনিয়ার্স, আর্টিস্টস, লিডার্স, আইকনস ও টাইটানস।
তার মধ্যে লিডার্স ক্যাটাগরিতে স্থান পাওয়া ২৭ জনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ২১ তম স্থানে রয়েছে। এই ক্যাটাগরিতে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, বৃটেনের প্রিন্স হ্যারি ও তার হবু স্ত্রী অভিনেত্রী মেগান মার্কেল, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, লন্ডনের মেয়ার সাদিক খান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, মার্কিন স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলার, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রন।
টাইম ম্যাগাজিনের এ তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লিখেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক মিনাক্ষি গাঙ্গুলি। তিনি লিখেছেন, ‘৯০ এর দশকে সর্বপ্রথম শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তখন তিনি বাংলাদেশে সামরিক শাসন বন্ধের দাবিতে জোরদার প্রচারণা চালাচ্ছিলে। সর্বশেষ আমাদের দেখা হয় ২০০৮ সালে, যখন তিনি প্রচারণা চালাচ্ছিলেন আরেক সামরিক শাষকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এর পরের বছর নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয়ের মধ্য দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া তার পিতার লেগ্যাসি বহনকারী হাসিনা কখনই লড়াইকে ভয় পান নি। কাজেই, গত আগস্টে যখন হাজার হাজার জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার আর্মির নৃশংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে প্রবেশ করা শুরু করলো, তখন তিনি এই মানবিক চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করলেন। দরিদ্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অতীতে শরণার্থীদের বিরাট ঢলকে স্বাগত জানায় নি। কিন্তু তিনি জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হওয়া বিপর্যস্ত ভুক্তোভোগীদের ফিরিয়ে দিতে পারেন নি। এজন্য তিনি প্রশংসার দাবিদার, কিন্তু তিনি মানবাধিকার নিয়ে বাজেভাবে হোচট খাচ্ছেন। তার সরকারের শাসনের অধীনে বিচারবহির্বুত হত্যাকা- ও বলপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটেছে। এ সরকার সমালোচনা বা ভীন্নমত বরদাশত করে না। ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, সেই শেখ হাসিনাকে এই কর্তৃত্বপরায়নতার দিকে যাওয়ার প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। মিয়ানমার ও অন্যদের জন্য তাকে উদাহরণ হওয়া প্রয়োজন; এটা দেখানো প্রয়োজন যে, গণতন্ত্র ভীন্নমত ও বৈচিত্রকে আপন করে নেয়।’
টাইম ম্যাগাজিনের এবারের তালিকায় প্রভাবশালী প্রত্যেকের প্রোফাইলেই তাদের সম্পর্কে লিখেছেন বিখ্যাত ও প্রভাবশালী অন্যরা। ইতিহাসের অন্যতম সেরা টেনিস তারকা রজার ফেদেরারকে নিয়ে লিখেছেন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে লিখেছেন টেড ক্রুজ। মেগান মার্কেলকে নিয়ে লিখেছেন প্রিয়াংকা চোপড়া। ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলিকে নিয়ে লিখেছেন ক্রিকেটের কিংবদন্তী শচিন টেন্ডুলকার। হিউ জ্যাকম্যানকে নিয়ে লিখেছেন অ্যানা হ্যাথওয়ে।
প্রভাবশালীদের মধ্যে ‘পাইনিয়ার্স’ ক্যাটাগরিতে রয়েছেন, অলিম্পিকে সর্বকনিষ্ঠ স্বর্ণজয়ী নারী ক্লোয়ি কিম, জনপ্রিয় কমেডি উপস্থাপক ট্রেভর নোয়াহ, চীনের কোয়ান্টাম পদার্থবিদ প্যান জিয়ানওয়েই প্রমুখ। ‘আর্টিস্টস’ ক্যাটাগরিতে রয়েছেন খ্যাতনামা অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান, জনপ্রিয় এক্স-ম্যান চরিত্র ওলভারিনখ্যাত হিউ জ্যাকম্যান, ওয়ান্ডার ওম্যান চরিত্রে বিশ্ব মাতানো গ্যাল গ্যাডট, বলিউড তারকা দিপীকা পাডুকোন প্রমুখ। ‘আইকনস’ ক্যাটাগরিতে অন্যদের মধ্যে আছেন খ্যাতনামা অভিনেত্রী, সঙ্গিতশীল্পি জেনিফার লোপেজ, রিহানা ও ব্ল্যাক প্যান্থার চরিত্রে বক্স অফিস মাতানো চ্যাডউইক বোসম্যান। আর সর্বশেষ ক্যাটাগরি ‘টাইটানস’-এ অন্যদের মধ্যে আছেন রজার ফেদেরার, অপরাহ উইনফ্রে, জেফ বেজস ও বিরাট কোহলি।