পয়লা বৈশাখ উদযাপনে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে নিমন্ত্রিত ১৬ হাজার জামাই ও মেয়েকে বরণ করলেন জনপ্রিয় চিত্র নায়িকা অপু বিশ্বাস। অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মাত্রাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক।
শনিবার বেলা আড়াইটায় মাত্রাই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের বিশাল মঞ্চে উপস্থিত হয়ে অপু বিশ্বাস মাত্রাই ইউনিয়নের সকল জামাই ও মেয়েকে পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় মাঠে উপস্থিত জামাই-মেয়ে ছাড়াও হাজার হাজার দর্শক মুহুর্মুহু করতালি ও হাত নেড়ে প্রিয় অভিনেত্রীকে শুভেচ্ছার জবাব দেন জানান।
পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে পহেলা বৈশাখকে বরণ করতে মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যতিক্রম এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। হেলিকপ্টারযোগে তিনি মাত্রাই আসেন বেলা দেড়টায়। আর মঞ্চে ওঠেন বেলা আড়াইটায়। সেখানে আধাঘণ্টা জামাই-মেয়ে ও দর্শকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ছাড়াও জনপ্রিয় একটি গানে ঠোঁট মিলিয়ে অভিনয় করে মুগ্ধ করেন মাত্রাই স্কুল মাঠের হাজার হাজার দর্শককে।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে আয়োজকদের পক্ষ থেকে ইউনিয়নের জামাইদের পান্তা পরিবেশনের পর প্রত্যেককে একটি করে লাল রঙের গামছা বিতরণ করা হয়। সম্মানিত করতে মঞ্চের সামনে জামাইদের জন্য আলাদাভাবে প্যান্ডেল নির্মাণ করে সেখানে তাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। প্রচণ্ড রোদ থেকে রেহাই পেতে জামাইরা উপহার পাওয়া সেই গামছা মাথায় দিয়ে অপু বিশ্বাসের শুভেচ্ছা গ্রহণ করার সময় মাঠের একাংশ লালে লাল হয়ে যায়।
এ সময় পয়লা বৈশাখের ব্যতিক্রম এ আয়োজন ও সেই আয়োজনে অপু বিশ্বাসকে অতিথি করার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক। তিনি এ আয়োজনে মাত্রাই ইউনিয়নের ১৬ হাজার ৮০৩ জন জামাই-মেয়েসহ ৩৩ হাজার ২০৮ জন স্বজনদের নামে দাওয়াতপত্র পৌঁছানোর কথা বলেন। যাদের আপ্যায়নে ‘কুটুমবাড়ি’ নামের একটি আলাদা প্যান্ডেল নির্মাণ করে শনিবার সকাল ৯টা থেকে পান্তা ভাতের সঙ্গে মাছের ফ্রাই, আলু ভর্তা, কাঁচা মরিচ ও পিঁয়াজ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
এ ছাড়া ইউনিয়নের প্রতিটি জামাইয়ের সম্মানার্থে একটি করে লাল গামছা উপহার দেওয়া হয়। আর ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পৃথক ৯টি ওয়ার্ডের নামে তৈরি করা প্যান্ডেলে পান্তা ভাত পরিবেশন করা হয়।
আয়োজকরা জানান, পহেলা বৈশাখের এ উৎসব বাস্তবায়নে তাদের সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক দীর্ঘ প্রায় চার মাস ধরে কাজ করছেন। ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের মেয়ে ও জামাইয়ের পুরো ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের নামে দাওয়াতপত্রের পাশাপাশি মোবাইল ফোন এবং সম্ভব হলে সরাসরি দেখা করে অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ফলে অনুষ্ঠানে প্রায় শতভাগ জামাই-মেয়ের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেছে। আর তাদের পান্তা ভাত দিয়ে আপ্যায়নের জন্য ৩০ মণ চাল, ৪০ মণ আলু ও পাঁচ মণ মাছের আয়োজন করা হয়।
পুরো অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করতে শুক্রবার বিকেল থেকেই বাঙ্গালির হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন খেলাধুলা ও গানের আসর বসানো হয়। সেখানে স্থানীয় শিল্পীরা রাতভর গান পরিবেশন করেন। এ ছাড়া আদিবাসী নৃত্য, নাগরদোলা, লাঠিখেলা, সাপ খেলা, বদন খেলা, বায়োস্কোপ ও আগের যুগের কৃষানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বাস্তব রূপ তুলে ধরা হয় ওই অনুষ্ঠানে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই বাঙালির হারিয়ে যাওয়া আয়োজন দেখে মুগ্ধ হন।
কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, আমাদের অঞ্চলে এটি একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ। বাঙালির কৃষ্টি কালচারের চর্চা না থাকায় আজকাল মানুষ অত্যন্ত স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এ ধরনের উদ্যোগ সেই স্বার্থপরতা ও ব্যাক্তিকেন্দ্রিকতার অবসান ঘটাতে ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।