সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেটের কানাইঘাটে একটি সরকারি রাস্তা বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে একটি মহল। এমনকি প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েও হয়রানী করা হচ্ছে। রাস্তা দখলদাররা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের কথাও মানছে না।
বুধবার(১১এপ্রিল) সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন উপজেলার ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের রাজাগঞ্জ, নওয়ামাটি, খাগড়ীকান্দি, আটলার পাহাড়, কুচিয়া, লুটির পাহাড় ও মইনার পাহাড় মৌজার ১২টি গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য রাখেন গাজীপুরের আহমদ হোসেন চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মহলের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়- রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের ওইসব গ্রামগুলোতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ ছিল। সকলের মাঝে ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও পারষ্পরিক আন্তরিকতা। কিন্তু গত প্রায় দেড়বছর ধরে রাজাগঞ্জ মৌজার গাজিপুর গ্রামের রশেন্দ্র চন্দ্র নাথ, রাধিকা রঞ্জন নাথ, রাধা চন্দ্র নাথ, দুল গোবিন্দ নাথ, রাজন চন্দ্র, অরুণ দেবনাথ, মশ্রব আলী, আজির উদ্দিন, মানিক মিয়া, ফয়জুল হকসহ কিছু ব্যাক্তি ১২টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি দখলের পাঁয়তারা শুরু করেন। তারা রাস্তাটির মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় সময় পাহাড় কেটে মাটি এনে ভরাট করে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী করে তুলেন।
এলাকার জনসাধারণ ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর ও ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি বিরোধী দলীয় হুইপ ও সিলেট-৫ আসনের এমপিকে অবগত করা হলে তিনি রাস্তাটি প্রশস্ত করার জন্য এলাকাবাসীকে বলেন। সেই প্রেক্ষিতে যুবসমাজ স্বেচ্ছায় পুরো রাস্তাটি জানুয়ারিতে প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ভূমিখেকোরা যুব সমাজের সাথে প্রশস্ত কাজের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে এলাকার জনসাধারণের বিরুদ্ধে গত ১১ জানুয়ারি ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এরপর তারা ১৩ জানুয়ারি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে রাতের আধারে রাস্তাটি একেবারে বন্ধ করে দেয়।
২১ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবগত করলে তিনি ২৩ জানুয়ারি সবাইকে নিয়ে রাস্তাটি পরিদর্শন করে রাস্তাটি খুলে দেয়ার মৌখিক নির্দেশ দেন। কিন্তু দখল প্রচেষ্টাকারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ মানেনি।
গত ২৭ জানুয়ারি এডিসি (রেভিনিউ), উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসিল্যান্ড, ওসি, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার পুনরায় বন্ধ রাস্তাটি পরিদর্শন করে রাস্তাটি খুলে দেন। কিন্তু এ চক্রটি আবারো রাস্তাটি বন্ধ করে দেয় এবং ভূমি দখল করার জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে কাল্পনিক বিষয় উপস্থাপন করে ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৫০০/৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৫৪/২১।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এলাকাবাসী কোন উপায় না দেখে জেলা প্রশাসক, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ওসি বরাবর আবেদন করেন। যার ডকেট নং ২৪৫ ও ১৭৩। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ১নং আদালতে একটি বিবিধ মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৫১/২০১৮। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৮ মার্চ নিজেদের খড়ের ঘড় পুড়িয়ে ভিডিও ধারণ করে কানাইঘাট থানায় ৯৮ জনের বিরুদ্ধে আবারো মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৬০/০২।
সংবাদ সম্মেলনে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার এবং ১২টি গ্রামের চলাচলের একমাত্র সরকারি রাস্তায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গ্রামের লোকদের মধ্যে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ছইফ উদ্দিন, আহমদ আলী, লুকেশ চন্দ্র নাথ, বাদশা মিয়া, আব্দুস সালাম, ইসলাম উদ্দিন, রুশন আলী, বশর মিয়া, বশির উদ্দিন, সুহেল আহমদ, জালাল উদ্দিন প্রমুখ।