ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলে কোটা সংস্কারপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা এবং আন্দোলন প্রতিহতে হুমকি-ধমকির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতভর উত্তাল ছিলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করে।
এ সময় আন্দোলন প্রতিহতের অংশ হিসেবে কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান ইশা (মাস্টার্স, দর্শন বিভাগ) মোরশেদা আক্তার (৪র্থ বর্ষ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ) নামে এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে বিক্ষোভে ফেটে পরে ঢাবির শিক্ষার্থীরা। হলের শিক্ষার্থীরা ইশাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা- ‘নিরপদ ক্যাম্পাস চাই,’ ‘পড়তে এসেছি, মরতে নয়,’ ‘হলে হলে অত্যাচার, বন্ধ করো বন্ধ করো’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
এদিকে, ছাত্রীর রগ কাটার ঘটনা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মেয়েদের হলগুলোতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কোটা সংস্কারপ্রত্যাশীরা। বেগম রোকেয়া হলের উম্মে হাবিবা বেনজির নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগ আন্দোলনকারী এক ছাত্রীর রগ কেটে দেয়ার কারণে হলের ভিতরের মাঠে বিক্ষোভ মিছিল করছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলো থেকেও শিক্ষার্থীরা বেরোনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদেরকে মারধর ও হুমকি ধমকি দিয়ে হল থেকে বেরোতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় হলে গেট দিয়ে বেরিয়ে সুফিয়া কামাল হলের সামনে অবস্থান নেয়।
ছাত্রীদের নির্যাতন ও একজনের পায়ের রগ কেটে দেয়ার ঘটনার পর ক্যাম্পাসজুড়ে মিছিল শুরু করে ছাত্ররা। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলসহ কয়েকটি হলে বের হতে বাধা দিলে একপর্যায়ের গেইটের তালা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে ছাত্ররা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জসিম উদ্দিন হল, বঙ্গবন্ধু হল, বিজয় একাত্তর হল থেকেও ছাত্ররা গেটের তালা ভেঙে রাস্তায় নেমে আসে। অপরদিকে ছাত্রীরা হলের ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেছে এবং তালা ভেঙ্গে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে।
রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সোয়া ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা উক্ত ঘটনায় জড়িত ইশাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং তাকে শাস্তির দাবি জানান।
ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগ থেকে ইফফাত জাহান ইশাকে তাৎক্ষণিকভাবে দল থেকে বহিষ্কারের বিবৃতি দেয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন।
এদিকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ইশাকে প্রথমে হল থেকে পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী।
পরে ইশাকে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বষ্কিারের পর শিক্ষার্থী হলের সামনে থেকে অবস্থান ত্যাগ করে।
এর আগে হলের নেতাদের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশ নেন।