দেড় বছরও টিকেনি গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের সংসার। শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস তার জাকির হোসেন তার বিয়ে ভাঙ্গার খবর নিশ্চিত করেছেন। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি পারিবারিকভাবে শিক্ষামন্ত্রীর কন্যা নাদিয়া নন্দিতা ইসলামকে বিয়ে করেছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস জাকির হোসেন বলেছেন, মেয়ের সম্মতিক্রমে তিন মাস আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। উভয় পরিবারের মধ্যে বিষয়টি গোপন ছিল। মন্ত্রী সোমবার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় একাধিক মন্ত্রী অভিযোগ করেন যে, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের প্রধান ইন্ধনদাতা ইমরান এইচ সরকার। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উস্কানিদাতাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে, সে যে-ই হোক না কেন। ইমরান আর আমার মেয়ের স্বামী নন। তিন মাস আগেই পারিবারিকভাবে তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে।
এ বিষয়ে ইমরান এইচ সরকারের মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন। তিনি বলেন, আপনারা ইতোমধ্যে বিষয়টি জেনেছেন।
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে মন্ত্রীকন্যা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিয়ার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ইমরান এইচ সরকার।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারিতে গণজাগরণ মঞ্চ গঠনের পর থেকে মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন ইমরান এইচ সরকার। এরপর থেকে বাংলাদেশে পরিচিত একটি মুখ চিকিৎসক ইমরান এইচ সরকার। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারীর বাজারপাড়া গ্রামের মতিউর রহমান সরকারের চার ছেলে ও মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ইমরান এইচ সরকার। তার জন্ম ১৯৮৩ সালের ১৪ অক্টোবর।
ইমরানের দাদার নাম হাজী খয়ের উদ্দিন সরকার। তিনি মুসলিম লীগ করতেন। মুক্তিযুদ্ধকালে শান্তি কমিটির সদস্য অভিযোগে ১৯৭১ সালের ১৪ জুন স্থানীয় মাখনেরচরে হাঁটুপানিতে নামিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ইমরানের বাবা মতিন সরকার স্বাধীনতার পরে সিপিবিতে যোগ দেন এবং ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ পান। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ইমরান এইচ সরকার ১৯৯৯ সালে এসএসসি ও ২০০১ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০০২ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজে ৩১তম ব্যাচে ভর্তি হন তিনি। পরে ইমরান ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক, আহ্বায়ক ও ইন্টার্ন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
ইমরান মেডিকেল থেকে পাস করার পর ২০০৯ সালে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ‘স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ’ (স্বাচিপ) ও আওয়ামী লীগের প্রচার উপ-কমিটিতে সক্রিয় হন তিনি।
তিনি অ্যাডহক ভিত্তিতে কুড়িগ্রামের উলিপুরে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানসথেশিয়া বিভাগে যোগ দেন।
২০১৩ সালে গণ জাগরণ মঞ্চ থেকে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি পান।
এদিকে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসলাম বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে হেফাজতে ইসলাম পাল্টা আন্দোলন গড়ে তুলে। হেফাজতের ডাকে ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ও ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে বড় সমাবেশ হয়।
৫ মে শাপলা চত্বরের সর্বশেষ সমাবেশে গভীর রাতে সরকারি বাহিনী রক্তাক্ত অভিযান চালিয়ে হেফাজত কর্মীদের হটিয়ে দেয়। এরপর দিন ৬ মে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চও উচ্ছেদ করে পুলিশ।
এরপরও বিভিন্ন সময়ে সক্রিয় করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের আপত্তির মুখে গণজাগরণ মঞ্চে বিভক্ত হয়ে যায়। এক পক্ষের নেতৃত্বে ইমরান থাকলেও আরেক পক্ষের নেতৃত্বে আসেন আওয়ামী লীগের প্রচার উপ-কমিটির আরেক সদস্য কামাল পাশা চৌধুরী।
এই বিভক্তিকে কেন্দ্র করে শাহবাগে ইমরান ও কামাল গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। তখন কামাল গ্রুপকে জামায়াত-শিবির বলে আখ্যা দেয় ইমরান।
এর প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান। তিনি বলেন,‘ইমরানের পূর্বপুরুষদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কী ভূমিকা ছিল তা বিশ্লেষণ করলেই আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।’
ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে গণজাগরণ মঞ্চের সরকারপন্থীদের তরফে চাঁদাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে তার নিত্যনতুন পাঞ্জাবি পরা নিয়েও প্রশ্ন আছে। গণমাধ্যমে তার শতাধিক পাঞ্জাবীর ফটো অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছিল।
ইমরান এইচ সরকার তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সব সময় অস্বীকার করে গেছেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপিল বিভাগে ইমরানের বিস্তারিত পরিচয় ও ঠিকানা জানাতে গিয়ে কী তথ্য হাজির করেন তার মাধ্যমেই হয়তো প্রকৃত সত্য জানা যাবে।