বড় বড় সাফল্য পেয়েছে বধর্মানের বিস্ফোরণ কাণ্ডের ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। গতকাল শুক্রবার গভীররাতে আসামের নলবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে শাহানুর আলম। ৩৩ বছর বয়স্ক এই ব্যক্তিই বর্ধমানের ঘটনার অন্যতম ফেরার। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার এখন পর্যন্ত যা তদন্ত ছিল তাতে ধৃত শাহানুর আলমই ছিল পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির নেটওয়ার্ক চালানোর প্রধান অর্থ জোগানদাতা ব্যক্তি।
এনআইএ’র গোয়েন্দাদের জেরায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মূলত কাউসারই ছিল বাংলাদেশে গ্রেনেড সরবরাহকারী। বাংলাদেশ থেকে এই বরাত পেয়েছিল। এক দিনে কমপক্ষে ১০টি গ্রেনেড দিতে হবে সে কারণে তাড়াহুড়ো করে ২ অক্টোবর খাগড়াগড়েও বাড়িতে শাকিল ও সোবাহান গ্রেনেডগুলো বানাচ্ছিল। সেই সময় কোনো রাসায়নিক বেশি মাত্রায় পড়ে যাওয়ায় ওই বিস্ফোরণ ঘটে এবং ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়। ওই দিন সেখানে আরো একজন ছিল আব্দুল হাকিম। গুরুত্বর আহত ওই হাকিমকে পুলিশ উদ্ধার করে তাঁকে চিকিৎসা দেয়। বর্তমানে এনআইএর হেফাজতে হাকিমকে জেরা করে এই তথ্য পেয়েছেন এনআইএ গোয়েন্দারা।
আসামের বড়পেটা জেলার সারবাড়ির থানার চাতলা গ্রামে এই শাহানূর আলমের আদিবাড়ি। পেশায় একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। আসাম পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে নলবাড়ির জেলার মোকামোয়া থানার লাউকুচি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করেছে এনআইএর গোয়েন্দারা। ২ অক্টোবার বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর পরই বর্ধমান থেকে উধাও হন শাহানূর। এনআইএ তাঁকে ধরার জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। নভেম্বরের শেষ দিকে শিলং যাওয়ার সময় আসাম থেকেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শাহনুরের স্ত্রী সুজানা বিবি।
শুক্রবার বর্ধমান বিস্ফোরণের এখন পর্যন্ত ধৃতদের কলকাতার মহানগর দায়রা আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্ত জিয়াউল হকের পক্ষে আইনজীবি রামদুলাল মান্না তার মক্কেলের জামিন আবেদন করে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু বিচারক এই আবেদন খারিজ করে ধৃত ছয়জনকে আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এদিন আদালতে তোলা হয়েছিল হাসেম মোল্লা, আব্দুল হাকিম, খালিদ মোহাম্মদ, জিয়াউল হক, রাজিয়া বিবি এবং আলিমা বিবি।
যদিও বর্ধমানের বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত সাজিদ ওরফে মাসুদ রানাকে বিধাননগর থানা পুলিশ দুদিন আগে বারাসতের আদালতে তুলে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গিয়েছে। বিধাননগর থানার সাজিদের বিরুদ্ধে গাড়ি চুরির একটি অভিযোগ রয়েছে। সেই মামলায় তাকে নতুন করে রিমান্ড নেওয়া হয়েছে বলে কমিশনারেট সূত্রে জানা গেছে।
তবে পুলিশ সূত্রের খবর, সাজিদ ওরফে মাসুদ রানাকে জেরা করে বাবুভাই নামের এক বড় মাফিয়ার সন্ধান পেতে চাইছে বিধাননগর পুলিশ। ভারতের কোটি কোটি টাকার জাল নোটের কারবার করে বাংলাদেশি এই মাফিয়া ‘বাবুভাই’। বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে যে সাজিদ ওরেফ মাসুদ রানার সঙ্গে বাবুভাইয়ের যোগ রয়েছে। যেমন রহিঙ্গাজঙ্গি খালিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল সাজিদের। গাড়ি চুরির তদন্ত করতে গিয়ে খালিদ মোহাম্মদকেও গ্রেপ্তার করে বিধানগর থানা পুলিশ। এরপরই খালিদের সঙ্গে বর্ধমানের বিস্ফোরণ কান্ডের যোগাযোগ প্রকাশ পায়। গোয়েন্দারা জানতে পারেন খালিদ বাংলাদেশ ও মায়নমার সীমান্তে আল কায়দার অন্যতম সদস্য হিসেবে জঙ্গিদের ট্রেনিং দেওয়ার কাজ করতেন। বর্তমানে প্রায় কয়েক শ রহিঙ্গা সদস্যকে খালিদ জেএমবির সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।