রংপুর: স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক এবং স্নিগ্ধার প্রেমিক কামরুল মাস্টার মিলেই খুন করেন রংপুর বিশেষ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে। স্নিগ্ধা এবং কামরুল দীর্ঘ দুই মাস ধরে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারা উভয়েই তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
বুধবার রংপুর র্যাব-১৩ অফিসে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী আগেই তাজহাট মোল্লা পাড়ার দুই কিশোরের সহযোগিতায় ২৮শে মার্চ একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরের মেঝের বালু সরিয়ে গর্ত করে রাখে তারা। পরের দিন রাতে ভাত ও দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি খাওয়ানো হয়। এরপর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে স্নিগ্ধা ও কামরুল মিলে তাকে হত্যা করেন।
র্যাব মহাপরিচালক জানান, এরপর শিক্ষক কামরুল পরদিন শুক্রবার ভোর পাঁচটায় রথীশের বাড়ি থেকে বের হন।
সকাল নয়টায় তিনি একটি ভ্যান নিয়ে আসেন। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী তাঁর প্রেমিকের সহায়তায় একটি আলমারি পরিবর্তনের নাম করে সেই আলমারিতে লাশ ভরে নিয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে শহরের তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে পুঁতে রাখেন। ওই আলমারি বহন করে ভ্যানে তোলার কাজে তিনজন ব্যক্তি নিয়োজিত ছিল, তাদের কামরুল ঠিক করেন।
র্যাবের মহাপরিচালক জানান, রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব গতকাল মঙ্গলবার নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি হত্যাকান্ডের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন এবং মৃতদেহের অবস্থান সম্পর্কে র্যাবকে জানান। এরপর র্যাব গতকাল রাত ১১টায় শহরের তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতর থেকে মাটি খুঁড়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। রাত আড়াইটায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
উল্লেখ্য, অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ছিলেন রংপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রংপুর বিভাগের ট্রাস্টি, পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা সভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনেরও প্রথম সারির নেতা। তিনি জাপানি নাগরিক কুনিও হত্যার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন। এছাড়া, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষী ছিলেন।