স্টাফ রিপোর্টারঃ
খালেদা জিয়া কারাগারে থাকাকালে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হবে বিএনপি। দলটির স্থায়ী সক্রিয় ৯ জন নেতা থাকবেন নীতিনির্ধারণী ভূমিকায়। আর পরামর্শ নেওয়া হবে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এমন নির্দেশনাই দিয়ে গেছেন বলে দলটির স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রের দাবি, কর্মকৌশল নির্ধারণে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই দল চলবে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নিয়ে আমরা স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করব। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট অন্য নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করব।’ তিনি জানান, চেয়ারপারসন সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চলতে বলেছেন।
দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি কিভাবে চলবে সেটি গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে। চেয়ারপারসন না থাকলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন। স্থায়ী কমিটি রয়েছে। এর আগেও বিএনপি চেয়াপারসনকে কারাগারে নেওয়া হয়েছিল। স্থায়ী কমিটি দল চালিয়েছে। এ ছাড়া চেয়ারপারসন কারাগারে, এটি সাময়িক। শিগগিরই তিনি জামিনে বের হয়ে আসবেন। আবার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে তাঁর পরামর্শ নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। সুতরাং বিএনপি কিভাবে চলবে—এ প্রশ্ন কেন তোলা হচ্ছে, পাল্টা প্রশ্ন তোলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সবচেয়ে প্রবীণ এই নেতা।
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও জানান, তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় ও স্থায়ী কমিটির যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত হবে বিএনপি।
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এখন সক্রিয় আছেন মাত্র ৯ জন নেতা। তাঁরা হলেন—ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ. লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তাঁদের বাইরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে সম্প্রতি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আর এম তরিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বেশ অসুস্থ হওয়ায় ইদানীং দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত হতে পারছেন না।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হলে গতকালই তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ অবস্থায় দল কিভাবে চলবে তা জানতে বিভিন্ন মহলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়।
তবে বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালনার দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়ার বিধান নেই। এক-এগারো-পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়া এক বছরেরও বেশি সময় কারাগারে থাকলেও দল পরিচালনার জন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তখন লন্ডনে ছিলেন।
বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী চেয়ারপারসন। আর গঠনতন্ত্রের ৮-এর (গ) ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ওপর সব দায়িত্ব বর্তায়। গ-এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে—‘চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।’ এই বিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তারেক রহমানই এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
গঠনতন্ত্রের ৮(খ)-এর ৫ ধারা অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান ‘জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভাসমূহে সভাপতিত্ব করবেন’ বলে উল্লেখ আছে। তবে এই ক্ষমতা তিনি প্রয়োজনবোধে অন্য কাউকে দিতে পারেন বলে একই ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড হলে বিএনপির নেতৃত্ব বা পদের অযোগ্যতা হিসেবে যে ধারাটি এত দিন বিএনপির গঠনতন্ত্রে ছিল, সম্প্রতি সেটি তুলে দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে গঠনতন্ত্রের এসংক্রান্ত সংশোধনী জমা দেন। এর ফলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হলেও নেতৃত্ব বা পদের ‘অযোগ্য’ কোনো বিষয় আর থাকল না। অর্থাৎ দলটির দুটি শীর্ষ পদে তাঁরাই বহাল থাকছেন।
গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারার ‘ঘ’-তে বলা ছিল : সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি বিএনপির কোনো পর্যায়ের কমিটির সদস্য কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
সূত্র মতে, সরকার এই ধারাটি ব্যবহার করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বিএনপির পদ বা নেতৃত্বে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে—এমনটি বুঝতে পেরেই ওই ধারা গত জাতীয় কাউন্সিলে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।