গাসিক নির্বাচন ভাবনা-২: শিক্ষা থেকে দীক্ষা নেয়া জরুরী

Slider গ্রাম বাংলা টপ নিউজ বাধ ভাঙ্গা মত

4bkbbf56a59bcfi5h4_800C450

 

 

 

 

 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর অফিস: ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান। তিনি আওয়ামীলীগ প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লাহ খানকে হারিয়ে জয় লাভ করে। ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে নিজের প্রতীক সহ সমর্থন করে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। প্রতীক পেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করার প্রথম মুহূর্তেই তিনি অপহরণ হন। ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা তাকে নির্বাচনী মাঠ থেকে তুলে নিয়ে যান ঢাকায়। এর কয়েক ঘন্টা পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বরাত দিয়ে মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ আসে  স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী এডভোটেক আজমত উল্লাহ খানকে সমর্থন করেছেন।

গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। অধ্যাপক মান্নানের  টেলিভিশন প্রতীক পেয়েছিল ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৪৪ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা’র দোয়াত-কলম মার্কায় পড়েছিল ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮৬৭ ভোট। ফলে এক লক্ষ ছয় হাজার ৫৭৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন মান্নান ।

আর আগে ২০১৩ সালের  ১৬ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চুড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। টঙ্গী ও গাজীপুর পৌরসভা, গাজীপুর সদর উপজেলার বাসন, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, কাউলতিয়া ও গাছা ইউনিয়নকে নিয়ে ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি করর্পোরেশন। যা দেশের ১১তম সিটি কর্পোরেশন। নবগঠিত এ সিটি কর্পোরেশনকে ৫৭টি ওয়ার্ডে বিভক্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ১৯টি। যার মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৬৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৮১ ও মহিলা ভোটার ৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৩ জন। সোয়া ১০ লাখের বেশি ভোটার রয়েছে এই সিটিতে ।

গত নির্বাচনে  মেয়র পদে প্রার্থী ৭ জন হলেও লড়াইটা মূলত দুই জনের মধ্যে ছিল। একজন মহাজোট সমর্থিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান এবং অপরজন ১৮ দল সমর্থিত বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নান।  নাগরিক কমিটির ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে নানা টানাপোড়েনের পর দলের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। সমর্থন দেন আজমত উল্লা খানকে। তখনকার সময়ে  নির্দলীয় এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক তারকারা। তবে নির্বাচন কেন্দ্রীক প্রচারণার অন্যান্য ইস্যুদেরকে ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরামহীন টানাহেঁচড়া। দুই প্রার্থীই দাবি করেন জাপার কর্মী সমর্থকরা তাদের পক্ষে আছেন। ঢাকায় এসে এরশাসের সঙ্গে দেখা করে আওয়ামী লীগ – বিএনপির দুই প্রার্থীই দাবি করেন তারা এরশাদের আশীর্বাদ পেয়েছেন। দুই প্রার্থীই শুধু নয় সমর্থনের জন্য দেখা করেছেন দুই দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারাও। ওই নির্বাচনে জাপার কর্মীদের বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় থাকতে দেখা গেছে। এরকম এক পরিস্থিতিতে নির্বাচনের দুই দিন আগেএরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেন মহাজোটের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে। নির্বাচনী প্রচারণায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়েও তৈরি হয় ধোঁয়াশা। দুই প্রার্থীই দাবি করেন হেফাজতের সমর্থন আছে তাদের পক্ষে।

সিটি করপোরেশন হওয়ার পর গাজীপুরের ওটি ছিল  প্রথম নির্বাচন। নির্বাচনে তরুণ ও শ্রমিক ভোটারকে বিশাল ফ্যাক্টর বলে মনে করা হচ্ছে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী সাত জন। কাউন্সিলরের ৫৭টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৪৯ জন আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলের ১৯টি পদে লড়ছেন ১২৮ জন। ভোটারের সংখ্যা ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৬৪ জন। নির্বাচনে মোট ৩৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৩৫টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছিল

গাসিকের প্রথম নির্বাচনের প্রতীক হাতে নিয়ে মেয়র প্রার্থী অপহরণ আর মেয়র হয়ে চেয়ার ছেড়ে দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকেন নির্বাচিত মেয়র। এই সূযোগে মেয়রের চেয়ার দখলে নিয়ে মেয়র হিসেবে কাজ চালিয়ে যান কাউন্সিলর।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান একাধিকবার কারাগারে ও রিমান্ডে গিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা চলছে। ওই সময়ে কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর মেয়রের চেয়ারে উঠ-বস করেন অধ্যাপক মান্নান ও আসাদুর রহমান কিরণ। অভিযোগ রয়েছে, কাউন্সিলর কিরণ মেয়রের চেয়ারে বসে যা যা করেছেন তা আজমত উল্লাহ খানের পরামর্শেই করেছেন। ফলে নির্বাচনে পরাজিত হয়েও মেয়রের কাজ মনিটরিং করেছেন আজমত উল্লাহ খান। আর কিরণের কাজকে বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় সমালোচনা করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। অনেক সময় দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম কারারুদ্ধ মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের মুক্তিও দাবি করেছেন। ফলে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের প্রথম মেয়াদটি ছিল অন্ধকারে  আচ্ছন্ন। ক্ষমতা লড়াই, চেয়ার নিয়ে টানাটানি আর এই ফাঁকে লুটপাট কতটুকু হয়েছে তা সময় জানিয়ে দেবে।

তাই জনগন বলছে, গাজীপুর সিটিকিরপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রতীক পেয়েও অন্য প্রার্থীকে সমর্থন করতে হয়। মেয়র হয়েও চেয়ার থেকে কারাগারে একাধিকবার যাতায়াত করতে হয়। আবার ফেল করেও আঙ্গুলের ঈশারায় মেয়র পদ চালানো হয়। সুতরাং গাজীপুর সিটিকরপোরেশন একটি অন্য রকম ভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এখানে জোয়ার ভাটায় বাতাস বেশী। এই নদীতে কখন কে ডুবে আর কে ভাসে বলা মুশকিল। তাই প্রার্থী ও ভোটারদের নদীর আবহাওয়া দেখে চলতে হবে এতে কোন বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *