কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে রাজপথের আন্দোলনেই সমাধান দেখছে দলটি। দলটির নীতিনির্ধারকেরা এ জন্য মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে দলটির চলমান কর্মসূচির ধরন পাল্টে যেতে পারে।
সিনিয়র নেতারা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার সহসা মুক্তির পথে সরকার ‘আইনি মারপ্যাঁচে’ ফেলে বাদ সাধবে সেটি বিবেচনায় নিয়েই আপাতত ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশল নেয়া হয়েছে। একই সাথে দলের নেতাকর্মী ও জনমতকে নির্বাচনের পথে কিভাবে আরো সক্রিয়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা-ও পরিকল্পনায় প্রাধান্য পাচ্ছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর দেড় মাসেরও বেশি সময় কেটে গেছে। প্রথম দিকে দলটির ধারণা ছিল, গ্রেফতারের সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে আসবেন চেয়ারপারসন। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে একের পর এক আইনি জটিলতা। শীর্ষ নেতাদের এখনকার পর্যালোচনা হচ্ছে- বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার যে করেই হোক জেলে রাখতে চাচ্ছে এবং সেটি নির্বাচন পর্যন্তও হতে পারে। বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা, বেগম জিয়াকে সরকার আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। আর এ জন্যই যে মামলায় খালাদা জিয়া কারাভোগ করছেন, উচ্চ আদলতে সরকার সে মামলার দ্রুত শুনানি নিষ্পত্তি করতে চাচ্ছে।
খালেদা জিয়ার কারাবন্দী হওয়ার পর তার মুক্তি দাবিতে বিএনপির গৃহীত ‘নরম কর্মসূচি’ নিয়ে মাঠপর্যায়ে কিছুটা সমালোচনা রয়েছে। মূলত একাদশ সংসদ নির্বাচনের এখনো আট-নয় মাস বাকি থাকায় দলের নেত্রীর কারামুক্তিকে ঘিরে কঠোর কোনো আন্দোলনের পথে যায়নি বিএনপি। সাংঘর্ষিক আন্দোলনের ‘সুযোগ’ সরকারকে না দিতেই এ পথ বেছে নেয়া হয়।
জানা গেছে, বিএনপি দলীয় প্রধানের কারামুক্তির দাবির পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতেও সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি বিভাগীয় সমাবেশগুলো সেই সিদ্ধান্তেরই ফল। দলের সিনিয়র একাধিক নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগপ্রধান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ আগে থেকেই জনসভা করছেন। খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে থাকলে তিনিও এ ধরনের সভাই করতেন। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে শীর্ষ নেতারাই সারা দেশে এ ধরনের সমাবেশ অব্যাহত রাখবেন। কেন্দ্রে বসে না থেকে মধ্যম সারির নেতাদেরও একই লক্ষ্যে তৃণমূলে পাঠানো শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটকেও বিএনপি ‘কারামুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচন’-এর যুগপৎ দাবিতে মাঠে নামানোর কাজ শুরু করেছে। আজ জোটের শরিকদের সাথে বিএনপির সিনিয়র নেতারা গুলশানে বৈঠক করবেন। সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখতে পারেন।
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচির ধরন কী হবে সে বিষয়ে তার পরামর্শই প্রাধান্য পাচ্ছে। দলের মহাসচিব ও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মিলে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। জানা গেছে, আপাতত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারেক রহমান। নির্বাচনী বছর হওয়ায় কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন তিনি। তারেক রহমান আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লন্ডনে একটি সভায় নীতিনির্ধারণী বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গেছে।
দলের সিনিয়র এক নেতা বলেছেন, মে মাসে রমজান শুরু হচ্ছে। এর আগে পর্যন্ত দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবির পাশাপাশি বিএনপি জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। নির্বাচনের চার-পাঁচ মাস আগে যে ধরনের কর্মসূচি দিলে দাবি আদায় হয়, সে দিকেই তারা অগ্রসর হবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নয়া দিগন্তকে বলেছেন, আজকে বিএনপির যে কর্মসূচির ধরন, সব সময়ই যে এ রকমই থাকবে তা বলা যায় না। বিএনপি মাঠে আছে, যদি তারা এভাবেই মাঠে থাকতে পারে তাহলে পরিবর্তন আসবেই। জনগণ সেই পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আইনি লড়াই করব, আবার রাজপথেও থাকতে হবে। শুধু আইনি লড়াই দিয়ে এই যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না।