রাতুল মন্ডল শ্রীপুর থেকে: বাবা তুমি কোথায় যাবে? আমিও তুমার সাথে যাব,শুক্রবার এলেই বাবার কাছে বায়না ধরত ছোট্ট দাদু মনিটা। আমিও টুপি পরব। এমনি ভাবে আস্তে আস্তে কথা গুলো বলছিলেন নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত প্রিয়কের মা বৃদ্ধা ফিরোজা বেগম। বাবা তাকে তাঁর জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবাসতেন তাকি বলার অপেক্ষা রাখে? কথাগুলো নেপালে বিমান বিধবস্তে নিহত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা গ্রামের মৃত শরাফত আলীর একমাত্র ছেলে এফএইচ প্রিয়কের।
স্ত্রী, একমাত্র শিশু কন্যা প্রিয়নময়ী,ফুফাতো ভাই মেহেদী, তাঁর স্ত্রী স্বর্ণাকে নিয়ে পারি জমান নেপাল। বাবাদের কাছে মেয়েরা একটু বেশী আদরের হয়। তাঁর পরে বাবার প্রথম সন্তান বলে কথ। আরব্য রজনী আলিফ লায়লা চরিত্র মালেকা হামিরার প্রাণ ভ্রমরা যেমন একটি পাখির মধ্যে লোকায়িত ছিলো। তেমনি প্রিয়কের প্রাণ পাাখি লুকায়িত ছিলো প্রিয়নময়ীর মধ্যে। আনন্দ আর হাসি খুশিতে ভরা ছিল তাঁদের ছোট্ট সংসার। কিন্তু হঠাৎ করে কালবৈশাখী ঝরের মতো এক নিমিষেই সব তছনছ হয়ে গেলো। ফুফাত ভাইয়ের অনুরোধে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ফারুক নেপালের উদ্দেশ্যে ইউএস বাংলার বিমানে পারি জমান।
আকাশে উড়ার আগে ছোট্ট সোনামনি প্রিয়নময়ী দাদুকে ফোন করে বলে, দাদু আমরা আকাশে উড়বো। তাঁরা যে উড়াল দিয়ে একেবারে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে তা কে জানতো। ফারুকের মেয়ে তামারা, স্ত্রী এ্যানীকে নিয়ে বিমানের মাঝামাঝি ঠিক একটু সামনে বসে। পিছনে ফুফাতো ভাই মেহেদী ও তাঁর স্ত্রী স্বর্ণা। বিমানটি নামার পুর্ব মূহুর্তেই ঘটে হৃদয় বিদারক মর্মান্তিক সেই ঘটনা। স্ত্রী, ফুফাতো ভাই, তাঁর স্ত্রী বেড়িয়ে আসতে পারলেও বেড়িয়ে আসতে পারেনি প্রিয়ক কথাটা মোটেও ঠিক না। বিমানের আগুনের ধোঁয়ায় চারদিকে যখন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না ঠিক তখনও ফারুক পাগলের মত খোঁজে বেরাচ্ছিলো কালজার টুকরো সোনামনি প্রিয়নময়ীকে। আর বার বার হয়তো বলে বেরাচ্ছিলো আম্মু, সোনামনি,কলিজার টুকরো সাতরাজার ধন মামনি তুমি কোথায়। খোঁজেও হয়তোবা পেয়েছিলো কিন্তু ততক্ষণে প্রাণভ’মরা পাখিটি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলো। তাই প্রাণের চেয়েও প্রিয় সন্তানের ভালোবাসার টানে সন্তানের সাথেই বিদায় নেন প্রিয়ক।