গাজীপুর অফিসঃ পৃথিবীর কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না—উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশই তাদের অপরাধী করে তোলে। সে প্রেক্ষাপটে আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী মানুষগুলোর নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এবং তাদের সমাজে পুনর্বাসন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে কারা সপ্তাহ-২০১৮-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।
কারাগারগুলোয় বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের কারাগারগুলো ক্রমান্বয়ে সংশোধনাগারে পরিণত হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলখানার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও বন্দিদের অপরাধপ্রবণতা কমানোর বর্তমান উদ্যোগ সবার অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছে। বিশেষ করে বন্দির হাতকে দক্ষ কর্মীর হাতে রূপান্তরের জন্য কারাগারে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ অন্যতম। কারা শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করে লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ বন্দিদের প্রদান করার সিদ্ধান্ত একটি সময়োচিত পদক্ষেপ।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, সাজা শেষে কারা শিল্পে নিয়োগের ফলে লব্ধ জ্ঞান ও প্রাপ্ত লভ্যাংশের অর্থ কাজে লাগিয়ে বন্দিরা সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগ পাচ্ছে। এতে সমাজে পুনঃপুনঃ অপরাধ করার প্রবণতাও কমে যাবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কারাবন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য ‘মোবাইল ফোন বুথ’ চালু একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। সর্বোপরি কারা প্রশাসনের দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ক্রমান্বয়ে সংশোধনাগারে পরিণত হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি কারা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী যেন কারাগারের ভেতরে অভিনব কায়দায় জঙ্গি পরিকল্পনা বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে বিষয়ে আপনাদের দৃঢ় মনোবলের পরিচয় দিতে হবে।’ কারাগারে আসা বন্দিদের একটি বড় অংশ মাদক মামলায় আটক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ সকল মাদকসেবী কিংবা মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে কারাগারে থেকে মাদক সেবন বা মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে তার জন্য আপনাদের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ আহম্মদ চৌধুরী, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন তাঁকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সামরিক, বেসামরিক ও কারা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি বেলুন উড়িয়ে কারা সপ্তাহ উদ্বোধন করেন এবং খোলা জিপে চড়ে কারামহাপরিদর্শকের সঙ্গে প্যারেড পরিদর্শন করেন। তিনি কারারক্ষীদের আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। তা ছাড়া সাত সেরা কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে পুরস্কার প্রদান ও প্যারেড কমান্ডারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি।
পুরস্কার : বেস্ট প্রডাক্টিভ জেল হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারকে অ্যাওয়ার্ড (ক্রেস্ট) দেওয়া হয়েছে। ওই কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। এ ছাড়া কাশিমপুর-২-এর ডেপুটি জেলার মাসুদ হোসেন, কুমিল্লার ডেপুটি জেলার শাহনাজ বেগম ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া জামানকে অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস, বান্দরবান জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার রিজিয়া বেগম বেস্ট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, মহিলা কারারক্ষী তারানা পারভীনকে বেস্ট ইনস্ট্রাক্টরের পুরস্কার (ক্রেস্ট) দেওয়া হয়।
বিকেলে রাষ্ট্রপতি গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) দ্বিতীয় সমাবর্তনে যোগদান করেন।