গাজীপুর: ১৯৭১ সালের ১৯মার্চ পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর ও শহীদদের স্মরণে সোমবার গাজীপুরে নাগরিক গণসংবর্ধনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
প্রতিবার সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পেলেও প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়া যুদ্ধাহত ইউসুফ আলী সরকার এবার আমন্ত্রণ পাননি।
ইউসুফ আলী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সেদিন আমার অনেক ভূমিকা ছিল। আহত হয়েছি। প্রতিরোধ যুদ্ধের অগ্রভাগে ছিলাম। যারা আমার পিছনে এবং আমার চেয়ে ভূমিকা কম ছিল তারা সকলে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। বিগত কয়েক বছর দাওয়াত পেলেও এবার না পাওয়ার কারণ জানি না।
তিনি বলেন, ৪৭ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন স্বীকৃতি পাইনি। ১৯৭১ সালের ১৩ডিসেম্বর আমার নেতৃত্বে ৪ কোটি ৬২ হাজার টাকা সম-মূল্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দের পর তা জয়দেবপুর থানায় জমা দেওয়া হয়েছিল। ওইসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ ১৭ দিনে ৭টি গরু মহিষের গাড়ি দিয়ে থানায় আনা হয়েছিল। এর জন্য ব্যক্তিগতভাবে ৮৭ হাজার টাকা যাতায়াত ভাড়া প্রদান করেছিলাম। তিনি বলেন, চত্বর বাজার আমার ওষুধের দোকান ছিল পাকবাহিনী তা লুট করে সব মালপত্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল।
ইউসুফের ছেলে আসাদুল আলম সরকার জানান, অপেক্ষার পরও বাবা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের কাছে গিয়েছিলাম কারণ জানতে। তখন তিনিও বিষয়টি জেনে অবাক হন। পরে তিনি দাওয়াতপত্র না পাঠানোর কারন খুঁজে দেখা হবে জানালে ফিরে আসি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাবার এত অবদান থাকা সত্ত্বেও ৪৭ বছরে স্বীকৃতি মেলেনি। যেখানে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।
এ বিষয়ে রোববার রাত ১০টায় মুঠোফোনে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, মুক্তিযোদ্ধা দপ্তর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সুশীল সমাজের কাছ থেকে যে তালিকা পেয়েছি সে অনুযায়ী আমরা দাওয়াতপত্র বিতরণ করেছি। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের দাওয়াতপত্র গুলো বিতরণ করা হয়েছে। বাকী বেসরকারি সব অতিথিদের তালিকা জেলা ও মহানগর কমিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা করেছেন। ইউসুফ আলী দাওয়াত পাওয়ার কথা।
তিনি বলেন, বিতরণের বাকি দাওয়াতপত্রগুলো আওয়ামী লীগের কাছে দিয়েছি। এসব কার্ড যারা মারা গেছেন বা মূলব্যক্তি তাদের পরিবারে কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা।
তালিকায় ইউসুফের নাম আছে কিনা? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সোমবার সকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে বলা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
আজকের এই দিনটি গাজীপুরবাসীর অহংকারের। ১৯৭১ সালের ১৯মার্চ বাংলাদেশে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ ও আত্মত্যাগের ঘটনা ঘটে। স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ হলেও গাজীপুরে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল আজকের দিনে। সেদিন হানাদারদের বুলেট কেড়ে নিয়েছিল চারটি তাজা প্রাণ। শহীদ হয়েছিলেন হুরমত, নেয়ামত, মনু খলিফা ও কানুমিয়া। গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন সন্তোষ কুমার মল্লিক, ইউসুফ আলী সরকার ও মো. শাহজাহান মিয়াসহ অনেকে।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দুই দিনের সফরে ১৯ মার্চ বিকালে হেলিকপ্টারযোগে গাজীপুর পৌঁছবেন। বিকাল ৩টায় তাঁকে গাজীপুর সার্কিট হাউসে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। বিকাল ৪টায় তিনি গণসংবর্ধনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিবেন। শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে ওই অনুষ্ঠানে ১৯ মার্চের হাই কমান্ড, অ্যাকশন কমিটি, শহীদ ও আহতদের মধ্যে ২১ জনকে সন্মাননা দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নৃত্য ও কোরাস পরিবেশনা করা হবে। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ১৯ মার্চ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সংগঠক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক।
অনুষ্ঠানে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর এবং সদস্যসচিব জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ।