জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টে দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি কমিশনকে (দুদক) লিভ টু আপিলে এ আদেশ দেন। আপিল বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
আদালত আগামী ২২ মে এ মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
এর আগে রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে সোমবার আদেশের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
রোববার আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন।
লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে রোববার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা আদালতে বারবার বলেছি আপিলটার শুনানি হোক। চার মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আমি বলেছি, প্রয়োজনে আরো সংক্ষিপ্ত সময় সময় বেঁধে দেয়া হোক আপিলের পেপারবুক তৈরি করার জন্য। আড়াই মাস জেলে আছেন বাকি দুই-তিন মাসের মধ্যে আপিল শুনানি হয়ে যাবে। তারপরও আপিল শুনানি করে উনি যদি মুক্ত হতে পারেন ভালো কথা।
অপর দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, উপমহাদেশে এবং আমাদের দেশে যতগুলো সিদ্ধান্ত আছে সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক হাইকোর্ট বিভাগ যদি কোনো জামিন আবেদন গ্রহণ করেন এবং জামিন দেন এবং সেখানে যদি কারণ উল্লেখ করে জামিন দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে সাধারণত আপিল বিভাগ কোনো হস্তক্ষেপ করেন না। আমরা মনে করি, আইনগত যে দিকগুলো আমরা আদালতে তুলে ধরেছি ইনশা আল্লাহ সবই আমাদের পক্ষে। দুদক-রাষ্ট্রপক্ষের কোনো কনন্ট্রোভার্ট করতে পারেনি। ফলে আমরা আশা করি হাইকোর্ট যে জামিন দিয়েছেন সেটি বহাল রাখবেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ চ্যালেঞ্জ করে দুদক ও রাষ্টপক্ষে পৃথক দুটি লিভ টু আপিল আবেদন দায়ের করা হয়। উভয় আবেদনেই খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগের দেয়া আদেশের মেয়াদ বৃদ্ধির আরর্জি জানানো হয়। আজ রোববার ওই আবেদনের উপর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
গত বুধবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল আবেদন দায়ের করতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টে দেওয়া জামিন আদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিত করে লিভ টু আপিল করতে বলেন। একই সঙ্গে রোববার দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিনের ওপর আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে অপর একটি আবেদন করা হয়।
গত সোমবার চারটি যুক্তি আমলে নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে আপিল শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক প্রস্তুত করতেও নির্দেশ দেন আদালত। জামিন আদেশে বলা হয়- সাজার পরিমাণ কম, মামলাটির বিচারিক আদালতের নথি এসেছে এবং এটি আপিল শুনানির জন্য পেপার বুক তৈরি হয়নি। বিচারিক আদালতে মামলা চলাকালে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন, তিনি জামিনে ছিলেন এবং জামিনের অপব্যবহার করেননি এবং তার বয়স এবং শারীরিক অসুস্থতার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হলো।
২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারিক আদালতের নথি পৌঁছার পর জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য সময় নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট। গত ২২ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। ওইদিন খালেদা জিয়ার জরিমানা স্থগিত করে বিচারিক আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করা হয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন। এছাড়া এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর চার আসামীকে ১০ বছর সশ্রম কারাদ- এবং ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।