আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ রিপোর্টার :
বসতঘর, প্রাইভেটকার ও দেহ তল্লাশীর পর এক যুবকের নামে র্যাবের অস্ত্র মামলা দেয়ায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন এক মা। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া গ্রামের হাসানুল ইসলাম আকন্দের মা বিধবা হামিদা বেগম (৬৫)।
প্রসঙ্গত, গাজীপুরের শ্রীপুরে অস্ত্রসহ দুই যুবক আটকের ঘটনায় গত ৭ মার্চ বুধবার তোলপাড় শুরু হয়। দিনব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
আটকৃকতদের মধ্যে শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল হাসান জিকু (৩৪) এবং শ্রীপুর পৌর যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আকন্দ শাওন (৩৫)। বুধবার বিকেলে শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল হাসান জিকুকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং রাতে হাসানুল ইসলাম আকন্দ শাওনকে অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়।
হাসানুল ইসলাম আকন্দ শাওনের স্ত্রী ক্যামিলি আক্তার জানান, মঙ্গলবার রাতে তার স্বামী শাওন ও বন্ধু জিকু বাঘের বাজার দরগাহ এলাকার একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখান থেকে অনুষ্ঠান শেষে প্রাইভেটকারযোগে রাত আড়াইটার দিকে মাওনা চৌরাস্তা ফ্লাইওভারের নিচে আসলে র্যাবের লোকজন তাদেরকে আটক করে। পরে শাওনের বাড়িতে এসে অস্ত্রের খোঁজ করে বসতঘর তল্লাশী করে। র্যাব সদস্যরা শাওনের বাড়িতে কিছু না পেয়েও শাওনকে সাথে নিয়ে যায়। পরে তার সাথে থাকা শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জিকুর বাসায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে তাদেরকে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
এদিকে, বুধবার ভোরে শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল হাসান জিকু ও তার সহযোগীকে একটি বিদেশী পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলিসহ আটক করা হয়েছে মর্মে খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গনমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় র্যাবের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, হাসানুল ইসলাম আকন্দ শাওন নামে একজনকে আটক করেছে র্যাব-১ এর সদস্যরা। বুধবার ভোরে কেওয়া বাজার এলাকায় একটি প্রাইভেটকার ও দেহ তল্লাশী করে শাওনকে একটি বিদেশী পিস্তল, ম্যাগজিন ও চার রাউন্ড গুলিসহ আটক করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। শাওন তার সহযোগীদের নিয়ে কেওয়া বাজারে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে কেওয়া বাজারের অটোরিক্সা চালক ফাইজুদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ও শ্রীপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামাল হোসেন বলেন, কেওয়া বাজার থেকে বুধবার ভোরে র্যাব কাউকে গ্রেপ্তারের খবর আমাদের জানা নেই। তাছাড়া এসময়ে বাজারে কোনো গন্ডগোলের খবরও আমরা পাইনি।
শাওনের স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, অস্ত্র না পেয়েও তার স্বামী শাওনকে অস্ত্র আইনে মামলা দেওয়া সাজানো, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক। শাওন শ্রীপুর পৌর আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী। রাজনৈতিক বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন শাওনকে ফাঁসিয়েছে।
শাওনের মা হামিদা বেগম কান্না কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে শাওনের বাসায় এবং তার সাথে কোনো অস্ত্র ছিল না। সে কখনো কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেনি। র্যাব তার বসতঘর, প্রাইভেটকার ও দেহ তল্লাশীর পরও অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে মামলাটি সাজানো এবং ষড়যন্ত্রমূলক। একজন মা হিসেবে আমি বিষ্মিত। আমি সকল প্রকার ষড়যন্ত্র থেকে আমার ছেলের মুক্তি চাই।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন) হেলাল উদ্দিন জানান, মামলা রুজুর পর তাকে গাজীপুর জেলখানায় পাঠানো হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা আদালতেই প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন।