শ্রীলঙ্কা : ২১৪/৬ (২০ ওভার), বাংলাদেশ: ২১৫/৫ (১৯.৪ ওভার)
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
বাংলাদেশ কি শিরোপা জিতে গেল! নিদাহাস ট্রফির একটু আধটু খবর রাখেন, তারা বোধ হয় অমন ভাবেনি। তাহলে এক জয়ে এত উৎসব বাংলাদেশের? হবেই না কেন। এক জয়ের আকুতি ছিল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। ম্যাচের পর ম্যাচ। জয়টা যদি আসে বীরত্বের মধ্য দিয়ে। সে জয়ের উৎসবের রঙ অমনই হয়। মুশফিকের অভিব্যক্তিতে ছিল অনেক কিছু। ম্যাচ তিনিই জিতিয়েছেন। ৩৫ বলে ৭২ রানের এক অপরাজিত ইনিংস নিশ্চিত হারা ম্যাচকে টেনে তুলেছেন। প্রতিপক্ষ যখন শ্রীলঙ্কা। তার কোচ যখন হাতুরাসিংহে। তখন এমন এক জয়ে মুশফিকের অভিব্যক্তি একটু অন্যরকম হবেই। টেস্ট ক্রিকেটের ক্যাপ্টেনসি হারানো থেকে শুরু করে অনেক কিছুই তো সহ্য করতে হয়েছে তাকে। তার দলকে। ফলে সে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ড করে বাংলাদেশের জয়ের উৎসবের রঙ প্রেমাদাসায় ছড়িয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। খুলনায় ২০১৬ তে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৪ তাড়া করে জেতার রেকর্ডই ছিল এতদিন। তা টপকে গেল কাল ২১৪ তাড়া করে জয়ের রেকর্ডে। আসলেই অবিশ্বাস্য লাগছিল সব। বদলে যাবে বাংলাদেশ সে বিশ্বাস ছিল। কিন্তু এত দ্রুত এবং এভাবে বদলে যাবে তা ভাবেনি কেউ। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার করা ২১৪ রান দেখে তো বটেই। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের দিনে করতে পারে অনেক কিছু, তারই প্রমাণ দিলো তারা আরেকবার। ব্যাটিংয়ে ১৯৩ এর ওপর রানই করেনি কোনো দিন। সে দল টেনশনের চেজিংয়ে করে ফেলবে ২১৫?
অনেক দিন থেকেই কথা চলছিল। কী যেন হচ্ছে না। এখানে ভুল, ওখানে ভুল। এটা হচ্ছে না,ওটা হচ্ছে না। সিনিয়র ক্রিকেটাররাও তা মানছিলেন। বলেও ছিলেন, একটি জয় সব বদলে দেবে। নিদাহাস ট্রফিতে সে অপেক্ষাতেই ছিলেন। ভারতের বিপক্ষেও কোনো কিছু না হওয়ায় হতাশায় ভেঙে পড়ার উপক্রম। কিন্তু কাল সে হতাশা পুঁজি করেই খেলল তারা অসাধারণ এক ম্যাচ। যাতে পিষ্ট শ্রীলঙ্কা। দুই বল হাতে রেখেই পৌঁছে যায় তারা জয়ের মার্কে। হঠাৎ এমন বিগ জয়ের পেছনে রহস্য কী। প্রশ্ন ওঠা-ই স্বাভাবিক। টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড মোটেও ভালো না।
আফগানিস্তানের পর যাদের র্যাংকিং (১০) তাদের ভালো খেলা না খেলা নিয়ে আর টেনশন কী! এ নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ। কিন্তু সামান্য পরিবর্তনেই কাল কেমন যেন জ্বলে উঠেছে তারা। তামিম ইকবালের সাথে ওপেন করতে নেমেছিলেন লিটন দাস। লিটন ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কিছু দিন ধরেই দুর্দান্ত খেলে চলেছেন। ম্যাচে তার ফর্মে থাকার প্রমাণ মিলল। সূচনা থেকেই শ্রীলঙ্কার কোনো বোলারকে পাত্তা দেয়নি। চার-ছক্কায় অন্যসব ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও জাগিয়ে দেন তিনি আত্মবিশ্বাস। ৫.৫ ওভারে আউট হন তিনি দলের রান ৭৪-এ নিয়ে। বাংলাদেশের পাওয়ার প্লের রেকর্ডও ওটা। ১৯ বলে ৫ ছক্কা, ২ চারের সাহায্যে ৪৩ করে আউট হন তিনি। এরপর তামিমের সাথে সৌম্য সরকারও ভালো খেলেন। ৯.৩ ওভারে শতরান পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। আর তখনই আউট তামিম ২৯ বলে ৪৭ করে। এরপর মুশফিক ও সৌম্য জুটি বাধলেও মুশফিক সূচনা থেকেই ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। দলের রান তারা ১৫১ এ নিয়ে বিচ্ছিন্ন হন। সৌম্যই আউট হন, ২২ বলে ২৪ করে। এরপর মুশফিক প্রথম মাহমুদুল্লাহ,এরপর অনেকটা একই দলকে নিয়ে যান জয়ের মার্কে। শেষ ওভারে ৯ রানের প্রয়োজন থাকলেও তা তিনিই কাভার করেন। ফলে দুই বল হাতে রেখেই পৌঁছে দেন তিনি দলকে জয়ের লক্ষ্যে। এটা তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস।
এর আগে শ্রীলঙ্কাও খেলেছিল অসাধারণ। বিশেষ করে কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। ৭৪ করে অপরাজিত ছিলেন পেরেরা। আর মেন্ডিস ৫৭। এ ছাড়া উপল থারাঙ্গার হার না মানা ৩২ রানের ওপর ভর করে ওই বিশাল সংগ্রহ ছিল স্বাগতিকদের। মুস্তাফিজ তিন উইকেট নিলেও রান দেন প্রচুর। মাহমুদুল্লাহ এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে কিছুটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলেও তা ছিল সাময়িক। বোলাররা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু চার-ছক্কার খেলায় অতটা সামাল দিতে পারেননি তিনি প্রতিপক্ষকে। লঙ্কানরা ঠিকই চলে যায় ওই বিশাল স্কোরে। এতে টুর্নামেন্টে তিন দলই একটি করে জয় পেল এবং একটি করে ম্যাচে হেরেছে। তবে এমন বিগ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে বাংলাদেশই। মুশফিকুর রহীম ম্যাচ সেরার পুরস্কার লাভ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : এদিকে বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রাতে নিদাহাস ট্রফি ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেটে জয়লাভ করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী এক অভিনন্দন বার্তায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এ সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ জানান।