টেকনাফের নে টং (দেবতার পাহাড়া) পাহাড়ের বনভুমি পুড়ে গেছে। এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও কয়েকটি এলাকায় হালকা আগুনের শিখা লক্ষ করা যাচ্ছে। যা নাশকতা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অনেকে রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিমকে ধরতে অতি উৎসাহী কেউ কেউ বনে আগুন দিয়েছে বলে মনে করছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ৮ মার্চ সকালে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডাকাত দলের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিমের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ডাকাত হোসেন আলী ওরফে বাইল্লা (৩২) নিহত হওয়ার ঘটনার পরপরই বেলা ১১টার দিকে সংরক্ষিত বনের ৪০টি স্থানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আগুনে লাখ লাখ চারা গাছ, বন্য প্রাণীসহ শতশত উপকারভোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন সংরক্ষিত পাহাড়ি বনের বিচ্ছিন্নভাবে ৪০টি পয়েন্টে আগুন ধরিয়ে দেয় দৃর্বৃত্তরা।
স্থানীয় প্রশাসনের ধারণা, দীর্ঘ বছর ধরে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা আবদুল হাকিম ডাকাত নে টং পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে এলাকায় ডাকাতি, খুন-গুম ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে নির্র্মূলে গত এক মাস ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলন ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল। এমনকি উপজেলা পরিষদ ঘেঁষে পুরান পল্লান পাড়ায় ওই হাকিম ডাকাতের বসতবাড়িতে এলাকাবাসী হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী হাকিম ডাকাতকে তাড়াতে পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) প্রণয় চাকমা জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তের আগুন প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা গাছপালা পুড়ে গেছে। পাশাপাশি সৃজিত বাগান ও পশু-পাখিদের আভাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা পাহাড়ে আগুন ধরিয়েছে তাদের খোঁজ নিয়ে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। আগুন নেভাতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ স্থানীয় লোকজন চেষ্টা চালিয়ে সন্ধ্যার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে এনেছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে টেকনাফের পৌরসভার নূর আহমেদ গুনা থেকে নাইট্যংপাড়া এলাকার পাহাড়ি বনে এ ঘটনা ঘটে।
বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে পৌর এলাকার পাহাড়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে আগুন জ্বলতে শুরু করে। এতে হাজার হাজার গাছপালা, সবজিক্ষেত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
টেকনাফ উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, হঠাৎ করে সকালের দিকে দুর্বৃত্তরা পাহাড়ের ৪০টি পয়েন্টে আগুন দিয়েছে। এতে ২০১৫-১৬ সনে সৃজিত সামাজিক বনায়নের ৭৫ একর ও ২৫ একর পশু খাদ্য বাগানসহ প্রাকৃতিকভাগে বেড়ে উঠা হাজার চারা গাছ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্য পশু-পাখি ও উপকার ভোগীরা। কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
টেকনাফ স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা কিরিতি বড়ুয়া বলেন, পাহাড়ে আগুন লাগার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও পাহাড়ের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। কয়েকটি স্থানে হালকা হালকা আগুনের শিখা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাও নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ চলছে।
কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মো: আলী কবীর জানান, এখনো পর্যন্ত কত বন পুড়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় দেড় শ’ একরের মতো বন পুড়ে যেতে পারে। এর মধ্যে ৭৫ একর হচ্ছে সামাজিক বনায়ন রয়েছে। এখানে হাতির আবাসস্থল রয়েছে।
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রবিউল হাসান বলেন, কারা আগুন দিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হঠাৎ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় লোকালয়ের কিছু অঞ্চল ঝুঁকিতে ছিল। তবে এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।