গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচজনের ১০ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর থেকে খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে আছেন।
রায়ের পর অনুলিপি পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এর ১১ দিনের মাথায় ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালত রায়ের অনুলিপি দেন। পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আর ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের নথি আসার পর আদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
মামলার অপর চার আসামি হলেন সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক রয়েছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। পাশাপাশি ছয় আসামিকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
রায়ে আদালত খালেদা জিয়া, তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ সাজাপ্রাপ্ত ছয়জন আসামিকে ‘রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন আদালত।
রায়ে আদালত বলেছেন, এ মামলার দণ্ডিত আসামিদের পরস্পরের যোগসাজশে সরকারি এতিম তহবিলের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। খালেদা জিয়া সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা হয়েও খালেদা জিয়াকে সরকারি এতিম তহবিলের ব্যাংক হিসাব খুলতে সহায়তা করেছেন এবং দুটি প্রাইভেট ট্রাস্টের অনুকূলে সরকারি অর্থের চেক বেআইনিভাবে দিয়েছেন, যা অপরাধে সহায়তার শামিল। আসামি তারেক রহমান, মমিনুর রহমান ও শরফুদ্দীন আহমেদ কৌশল অবলম্বন করে সরকারি এতিম তহবিলের টাকা পরস্পরের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন। আদালত মনে করেন, এই মামলার ছয় আসামিই প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়েছেন। তাঁরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন।
এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক এ মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট ছয়জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেন দুদকের উপপরিচালক হারুন অর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আদালত খালেদাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত।