শাবিতে জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত, হাসপাতালে ভর্তি

Slider সিলেট

298628_138

 

 

 

 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আহত অবস্থায় তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এক হামলাকারীকে আটক করেছে।

জানা গেছে, শনিবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ফেস্টিভ্যালের সমাপনী অনুষ্ঠান চলাকালে ড. জাফর ইকবালের ওপর এ হামলা চালানো হয়। তার ঘাড়ে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ছুরির আঘাত তার মাথায় লেগেছে। হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীরা এক হামলাকারীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। ওই হামলাকারীকে গণপিটুনি দেয়ায় সে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। ওই হামলাকারীর পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশও এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেনি। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহত জাফর ইকবালের মাথায় সেলাই করা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান করছে।

জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুর রহমান জাফর ইকবালের ওপর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কী কারণে কারা এই হামলা চালিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং- এর এক উৎসবের সভামঞ্চে অধ্যাপক জাফর ইকবাল সোফায় বসেছিলেন। এ সময় হঠাৎ মঞ্চের পেছন থেকে এক যুবক এসে তাকে ছুরিকাঘাত করেন। ছুরিকাঘাত করে পালানোর সময় উপস্থিত ছাত্ররা যুবককে ধরে পিটুনি দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এসে তাকে উদ্ধার করে শিক্ষাভবন (এ)- এর ভেতরে নিয়ে যান।

এ রিপোর্ট লেখাকালে জানা গেছে, আহত ড. জাফর ইকবাল ‘শঙ্কামুক্ত’। এ তথ্য জানিয়েছেন একজন চিকিৎসক। ওসামানী হাসপাতালের ওই চিকিৎসক শনিবার রাত পৌনে ৭টায় জানান এ তথ্য। তিনি আরো জানান, জাফর ইকবালের মাথায় অস্ত্রোপচার প্রয়োজন কি-না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

এদিকে, সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব জানিয়েছেন, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী একাই ছিল। তার সাথে আর কেউ ছিল না। তাকে আটক করা হয়েছে। তবে, ওই হামলাকারীর পরিচয় জানাতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

জাফর ইকবাল বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রসঙ্গত শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের ফেস্টিভাল উদ্বোধনকালে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শাবিপ্রবিতে র‌্যাগিংয়ের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা ও বহিষ্কৃতদের সাজা কমানোর দাবিতে কতিপয় শিক্ষার্থীর আন্দোলনের ঘটনায় জাতির কাছে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, র‌্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃতদের শাস্তি কম হয়ে গেছে। তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পরে যখন দোষীদের শাস্তি দেওয়া হলো তখন ওই শাস্তি মেনে নিয়ে তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে তারা শাস্তি কমানোর দাবিতে আন্দোলন করছে। এর মাধ্যমে তারা ছাত্রদের কষ্ট দিচ্ছে, শিক্ষকদের সাথেও বেয়াদবি করছে। তিনি বলেন, ওইসব শিক্ষার্থীর শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত। লজ্জাবোধ থেকেই সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি। এই মন্তব্যের একদিন পর ড. জাফর ইকবাল ছুরিকাহত হন।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৬ নবীন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী একটি মেসে ডেকে নিয়ে অর্ধনগ্ন করে রাতভর র‌্যাগিং করে একই বিভাগের ১৯ সিনিয়র শিক্ষার্থী। এমনকি অর্ধনগ্ন করে ছবি তুলে ফেসবুকে সেসব ছবি আপলোড করতে বাধ্য করা হয় ছয় শিক্ষার্থীকে। এ ঘটনায় গত বুধবার ২ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, ৩ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারসহ ১৯ জনকে শাস্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সিদ্ধান্তের পরপরই শাস্তি কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নামে সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা দুই শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *