মশা। আকারে অতি ক্ষুদ্র হলেও এই পতঙ্গটির যন্ত্রণায় রাতের ঘুম হারাম অনেকেরই। শুধু কি তাই, দিনের বেলায়ও এখন এর যন্ত্রণা থেকে রক্ষা নেই। এতটুকু হলেও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা যেত। কিন্তু বিরক্তিকর উপদ্রবের পাশাপাশি মশা বহন করে নানা ধরনে সংক্রামক রোগজীবাণু। যা অনেক সময় মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস প্রভৃতি মারাত্মক রোগ সংক্রমিত হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মশা তাড়ানোর সহজ ও কার্যকরী ৭টি উপায়-
১. ফ্যান চালু রাখুন:
মশারা খুবই হালকা। অন্যদিকে একটি ফ্যানের স্পীড ঘন্টায় প্রায় দুই মাইল। মশাদের উড়বার গতিবেগের চাইতে ফ্যানের ঘুরবার গতি অনেক বেশি হওয়াতে সহজেই মশাদের ব্লেডের কাছে টেনে নেয়। আপনার বসার স্থান কিংবা ডেক বা যেসব স্থান থেকে মশারা খুব সহজে আপনার গৃহে প্রবেশ করতে পারে, এমনসব স্থানে মশাদের আগমন সময়ে আপনার টেবিল ফ্যান বা পেডাল ফ্যানটি চালু রাখুন। মশাদের হাত থেকেও যেমন নিস্কৃতি পাবেন তেমনি গরমেও পাবেন আরাম।
২. লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার:
লেবু খণ্ড করে কেটে ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর মধ্যে লবঙ্গের পুরোটা ঢুকাবেন শুধুমাত্র লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে থাকবে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে ঘরের কোণায় রেখে দিন। ব্যস, এতে বেশ কয়েকদিন মশার উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে ঘরের মশা একেবারেই দূর হয়ে যাবে। আপনি চাইলে লেবুতে লবঙ্গ গেঁথে জানালার গ্রিলেও রাখতে পারেন। এতে করে মশা ঘরেই ঢুকবে না।
৩. নিমের তেল ও পুদিনার ব্যবহার:
নিমের মশা তাড়ানোর বিশেষ একটি গুণ রয়েছে। নিমের তেল ত্বকের জন্যও বেশ ভালো। তাই একসাথে দুটি উপকার পেতে ব্যবহার করতে পারেন নিমের তেল। সমপরিমাণ নিমের তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন। দেখবেন মশা আপনার ধারে কাছে ভিড়বে না এবং সেই সাথে ত্বকের অ্যালার্জি, ইনফেকশন জনিত নানা সমস্যাও দূর হবে। আর একটি ছোট গ্লাসে একটু পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে ৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন খাবার টেবিলে। ৩ দিন অন্তর পানি বদলে দেবেন। দেখবেন ঘরের সব মশা পালিয়েছে।
৪. ধুনোর সঙ্গে নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো:
প্রতিদিন নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো ধুনোর সঙ্গে ব্যবহার করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৫. হলুদ বৈদ্যুতিক আলো:
ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে চাইলে, ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। ফলে হলুদ আলো হবে। দেখবেন মশা কমে গেছে, কারণ মশা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে চায়।
৬. চা-পাতা ও নিমপাতা পোড়ান:
ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ওই চা পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে। এছাড়া নিমপাতা পোড়ালে যে ধোঁয়া হয়। তা মশা তাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর।
৭. কর্পূর ও রসুনের ব্যবহার:
মশা কর্পূরের গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারে না। একটি ৫০ গ্রামের কর্পূরের ট্যাবলেট একটি ছোট বাটিতে রেখে বাটিটি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এরপর এটি ঘরের কোণে রেখে দিন। তাৎক্ষণিকভাবেই মশা গায়েব হয়ে যাবে। দুই দিন পর পানি পরিবর্তন করে নিন। এছাড়া রসুনের স্প্রে মশা তাড়াতে খুবই কার্যকারী প্রাকৃতিক উপায়। ৫ ভাগ পানিতে ১ ভাগ রসুনের রস মেশান। মিশ্রণটি একটি বোতলে ভরে শরীরের যেসব স্থানে মশারা কামড়াতে পারে সেসব স্থানে স্প্রে করুন। এতে করে যে কোন ধরণের রক্ত চোষারা আপনার ধারে কাছেও আসবে না।