জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ কি আওয়ামী লীগের হাতেই?

Slider সারাদেশ

297726_168

বিবিসি: সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ এখন কার হাতে?

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং জাপার (জাতীয় পার্টি) সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আমাদের মন্ত্রীগুলোকে উইথড্র করে নেন। আমাদের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে দিন। কিন্তু আমি জানি না, কেন সেটা হয়নি”।

তিনি আরো বলেন, “না-হয় আমাদের ৪০ জনকে সরকারে নিয়ে নেন। বিরোধী দল দরকার নেই”।

পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি যখন দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তখন অনেকেই প্রশ্ন করছেন তাহলে জাতীয় পার্টির অবস্থানটা আসলে কী?

দলের নেতৃস্থানীয় অবস্থান থেকে মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার কথা তিনি বলতে পারছেন না কেন?

এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। পার্টির মধ্যেকার কোন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রওশন এরশাদ এই ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন সেটা জানতে দলের একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্য করতে চাননি।

একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন বিষয়টা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। দলীয় ফোরামে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই নেতা জানান, দলের চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সাথে আলোচনা করে তিনি (রওশন এরশাদ) এই কথা বলেছেন কিনা সেটাও আমাদের জানা নেই।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু এবারে নির্বাচনের বছরে এসে রওশন এরশাদের বক্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানাভাবে দেখছেন।

লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, “আমার কাছে পুরো বিষয়টাই হাস্যকর মনে হয়। জাতীয় পার্টি কি সিদ্ধান্ত নেবে, কিভাবে চলবে – এই সিদ্ধান্তটা জাতীয় পার্টি নিতে পারছে না। এটা সম্ভবত সরকারি দল আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই আসছে”।

তিনি আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বা আওয়ামী লীগের ইচ্ছা এবং পছন্দ অনুযায়ী কিন্তু জাতীয় পার্টি চলছে, সুতরাং সে ছাঁচে পড়ে প্রধানমন্ত্রী বা আওয়ামী লীগ যেভাবে চাইবে সেভাবেই তারা চলবে”।

জাতীয় পার্টির তিনজন সদস্য এখন মন্ত্রিসভার সদস্য। গতকাল এই বক্তব্য দেয়ার সময় দুইজন সংসদে উপস্থিত ছিলেন। রওশন এরশাদ এই বক্তব্য যখন দিচ্ছিলেন তখন পাশ থেকে একজন এই আলোচনা বাদ দিতে বলেন। কিন্তু তিনি বলেন, “এটা তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাদ দেব কেন?”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, “এটা যদি আপনি করতেন, জাতীয় পার্টি বেঁচে যেত। জাতীয় পার্টি সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারত। আমরা এখন সম্মানের সঙ্গে নেই”।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মাঝে পড়ে জাতীয় পার্টির অবস্থা আসলেই দিশেহারা।

জাতীয় পার্টির মধ্যে কয়েকটা গ্রুপ আছে, যার কারণে কয়েক দিন পর পরেই তাদের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন দেখা যায় বলে তিনি উল্লেখ করছিলেন।

এদিকে রওশন এরশাদ হতাশা প্রকাশ করে গতকাল আরো বলেন, “আমরা যখন বাইরে যাই, তখন সবাই বলে, তুমি কোথায় আছ, সরকারে না বিরোধী দলে? আমরা তো বলতে পারি না”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *