২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে এবারের মহান একুশের গ্রন্থমেলা। মেলায় বিদায়ের সুর বেজে উঠেছে। সেই সাথে শেষ মুহূর্তের বিক্রিও চলছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
শেষ সময়ে বইবিক্রির অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন প্রকাশকরা। মিশ্র প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন অনেক স্টল মালিক। অন্য প্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, গত মেলার চেয়ে বিক্রি ভাল। তারা ৬১টি সৃষ্টিশীল নতুন গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। বিক্রির শীর্ষে রয়েছে হুমায়ুন আহমেদের বই। আগামী প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী ওসমান গণি বলেন, তাদের স্টলে বিক্রির সেরায় রয়েছে উপন্যাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কগ্রন্থ। মেলায় স্টল সাজানোর ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পারিজাতের স্বত্ত্বাধিকারী শাহাদাত লিটু বলেন, স্টল সাজানোর ক্ষেত্রে গভীরভাবে চিন্তা করা হয়নি। যার কারণে অনেক স্টলের কাছে ক্রেতার সংখ্যা কম ছিল। সব ক্রেতা ঘুরতে পারেন সহজে সেভাবেই স্টল সাজানো প্রয়োজন ছিল।
অনন্যা’র স্বত্ত্বাধিকারী মনির হোসেন জানান, তাদের স্টলে বিক্রির র্শীর্ষে রয়েছে উপন্যাস ও প্রবন্ধের বই। তিনি জানান,মেলায় শেষ সপ্তাহে বিক্রি বেড়েছে।
একুশের গ্রন্থমেলার বিশেষ আকর্ষন হচ্ছে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর। লিটল ম্যাগাজিনের নামে স্টলগুলোতে সারাক্ষণই ক্রেতার ভীড়। সারাদেশের লেখকদের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে এই চত্বর। বাংলা একাডেমির বর্ধমান ভবনের পাশে বয়রা তলায় এই চত্বরে একশত চব্বিশটি স্টল হচ্ছে লিটন ম্যাগাজিনের। স্টলগুলোতে লিটন ম্যাগাজিন ও এইসব পত্রিকা থেকে প্রকাশিত বই বিক্রি হচ্ছে। মেলায় লিটল ম্যাগাজিন বিক্রির অবস্থাও এবার সন্তোষজনক বলে স্টলগুলো থেকে বাসসকে বিক্রেতারা জানান। স্টলগুলোর মধ্যে রয়েছে, শংখচিল, ঘাসফুল, বিবর্তন, বৈঠক, দাগ, ছোট কাগজ, স্বপ্ন ৭১, শালুক, কবিতার রাজপথ, শাব্দিক, জমিন, ধ্রুপদ, রোদ্দুর, শ্লোক, মেলবন্ধন, পারাবত, কাশবন, করাতকল, ম্যাজিক লন্ঠন, কবিতা বাংলা, জলছবি, ব-বর্গীয়, মেঘ, মাটি, সপ্তবর্ণ, চিরকূট, দৃষ্টি, লোক, কবিতাওয়ালা, খনন’সহ বাহারি নামের স্টল।
লিটল ম্যাগাজিন ‘শালকু’ সম্পাদক কবি ওবায়েদ আকাশ বাসসকে বলেন, এবারের মেলায় লিটল ম্যাগাজিন বিক্রি অন্যান্য বারের চেয়ে ভাল। সারাদেশে সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত তরুণ লেখকরা লিটল ম্যাগাজিনে লিখেন। মেলায় তারা প্রথমেই লিটল ম্যাগাজিন ক্রয় করেন। তিনি বলেন, সাহিত্য চর্চায় নেতৃত্ব দিচ্ছে এই সব ম্যাগাজিন। একুশের গ্রন্থমেলা হচ্ছে তরুণ লেখকদের মিলনমেলা।
‘খনন’ সম্পাদক অভিজিৎ রায় বলেন, তৃতীয় বারের মতো খননের পক্ষ থেকে তারা মেলায় অংশ নিচ্ছেন। বিগত দুইমেলার চেয়ে এবার মেলা জমজমাট। তাদের পত্রিকাটি বিক্রি হয়েছে প্রচুর। খনন থেকে প্রকাশ করা তিনটি বইও বিক্রি হচ্ছে এই স্টলে। তিনি জানান, বয়রা তলায় লিটল ম্যাগাজিন স্টলে কতটা বিক্রি হচ্ছে,তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে,প্রতিষ্ঠিত,তরুন ও নবীন লেখকদের আড্ডা হচ্ছে প্রাণবন্ত।
আজ মেলায় ‘ বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা এবং বাংলাদেশে প্রকাশনার মান উন্নয়নের সমস্যা ’শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ফজলে রাব্বি। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খান মাহবুব। আলোচনায় অংশ নেন বদিউদ্দিন নাজির, রেজাউদ্দিন স্টালিন ও মোস্তফা সেলিম।
আগামীকাল বিকেল চারটায় মূল মঞ্চে রয়েছে ‘বাংলাদেশের আদিবাসী’ র্শীষক আলোচনা সভা। সন্ধ্যা ৬টায় রয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিয়ষক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।