বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হওয়া নিয়ে আবারও জাতিসংঘের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছে সংস্থাটি। তবে জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও অবাধ, সুষ্ঠু ও উন্মুক্ত নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে তারা।
গত সোমবার রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি এক সাংবাদিক জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কাছে খালেদা জিয়ার সাজা নিয়ে আবারও প্রশ্ন করেন। সে ক্ষেত্রে খালেদার সাজা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে কোনো ফোন বা বিবৃতি না পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন তা তুলে ধরা হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিককে ওই সাংবাদিক বলেন, ‘আপনি জানেন, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী নেতা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। এ বিষয়ে আমার প্রশ্ন করার কারণ হলো… দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছুই বলছে না। আর তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। তাই আমার প্রশ্ন হলো, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য মহাসচিবের পক্ষ থেকে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?’
জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমি, আমরা এরই মধ্যে গ্রেপ্তার (খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড) এবং এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে বলেছি। আর আমরা নীতিগত অবস্থান থেকে সর্বত্র অবাধ, সুষ্ঠু ও উন্মুক্ত নির্বাচন দেখতে চাই।’
এর আগে গত ৮, ৯, ১২ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিও জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিকরা খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। সেদিনই তাঁকে কারাগারে নেওয়া হয়।
খালেদার সাজা হওয়ার দিন রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক বলেছিলেন, তাঁরা খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড এবং এ সম্পর্কিত ঘটনার খবর পেয়েছেন। জাতিসংঘ এসব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাবে। তবে সহিংসতার যেকোনো খবরে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন হবে। জাতিসংঘ সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানায়। পরিস্থিতি পর্যালোচনা শেষে জাতিসংঘ আরো প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিভাগ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে বলার মতো কিছু থাকলে জাতিসংঘ বলবে।
১২ ফেব্রুয়ারির ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাদণ্ডাদেশ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাদণ্ডাদেশ এবং বিএনপির উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন নেতার গ্রেপ্তারের ঘটনা তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন। এ বিষয়ে আরো জানা গেলে অবশ্যই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হবে।
এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারির ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডাদেশের ফলে আবারও একতরফা নির্বাচনের শঙ্কা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে দেখার কথা আগেই বলা হয়েছে। জাতিসংঘ তার উদ্বেগ জানিয়েছে। নীতিগত অবস্থান থেকে জাতিসংঘ বিশ্বের যেকোনো দেশের মতো বাংলাদেশেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে।