শ্রী দেবীই এ যাবৎকালের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী যিনি বলিউডের পাশাপাশি একাধারে তামিল, তেলেগু, মালায়লাম, এবং কান্নাড়া সিনেমা শিল্পের তুমুল জনপ্রিয় ও আকাঙ্খিত অভিনেত্রী ছিলেন। স্বভাবজাত অভিনয়ের জন্য ভারতের প্রতিষ্ঠিত প্রায় সব সিনেমা শিল্পের খ্যাতির চূড়ায় ছিলেন তিনি। ভারতের যে কয়টি সেরা সিনেমা শিল্প রয়েছে, এর সবগুলোর দ্যুতি ও খ্যাতি ছড়াতে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন শ্রী দেবী। সত্তর দশক থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশক অবধি শ্রী দেবী মানে এককথায় সুপার ডুপার হিট। আর এর ফলে তাকেই ভারতীয় সিনেমার প্রথম প্রকৃত নারী সুপার স্টার বলা হয়।
শক্তিমান অভিনেত্রীর পাশাপাশি তিনি নৃত্যশিল্পী ও কৌতুক অভিনেত্রী হিসেবেও অমিত প্রতিভার অধিকারী। শ্রী দেবী অভিনীত শেষ ছবিটির নাম ‘মম’, এটি ২০১৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল। এছাড়া, চলতি বছরে মুক্তি পেতে যাওয়া শাহরুখ খানের জিরো সিনেমার অংশ বিশেষেও দেখা যাবে এই চির সবুজ শিল্পীকে।
আসুন একনজরে দেখে নেই, এই গুণী শিল্পীর কিংবদন্তি মহাতারকার হওয়ার পথে অভিনীত তুমুল জনপ্রিয় এবং প্রসংশিত সিনেমাগুলো।
১. থুনাইভান (১৯৬৯)
সাদা-কালো এবং আংশিক রঙ্গিন সেলুলয়েডের ফিতায় চিত্রিত এই সিনেমাটিতে তিনি লর্ড মুরুগা-এর ভূমিকায় অভিনয় করেন। এটি তার প্রথম সিনেমা। এতে তিনি শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয়ে করেন।
২. মেন্ডাম কোকিলা (১৯৮১)
ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি এই সিনেমায় শ্রী দেবীর বিপরীতে ছিলেন দক্ষিণের আরেক কিংবদন্তি সিনেমা ব্যক্তিত্ব কমল হাসান। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার (তামিল) লাভ করেন শ্রী আম্মা দেবী।
৩. মুনদ্রাম পিরাই (১৯৮২)
বালু মাহেন্দ্রুর এই ক্লাসিক্যাল সিনেমায়, এক সড়ক দূর্ঘটনায় শ্রী দেবীর স্মৃতি শিশু বয়সে চলে যায়। এমন অবস্থায় স্কুল শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয়কারী কমল হাসান তাকে আশ্রয় দেন। সিনেমাটি হিন্দিতেও তৈরি করা হয়েছে, নাম সাদমা।
৪. হিম্মতওয়ালা (১৯৮৩)
কে. রাঘবেন্দ্রা রাওয়ের মিউজিক্যাল ব্লকবাস্টার সিনেমা মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো হিন্দি সিনেমার দর্শকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন। এই সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি ‘কুখ্যাত’ ‘থান্ডার থাই’ বা ‘তাণ্ডব উরু’ তকমা পেয়েছিলেন শ্রী দেবী।
৫. সাদমা (১৯৮৩)
মুনড্রাম পিরাই সিনেমার পরিচালকই এর হিন্দি সংস্করণের তৈরি করেন, নাম দেন সাদমা। এতে শ্রী দেবী স্মৃতি হারিয়ে ৮ বছরের বালিকায় পরিণত হন। এই সিনেমার কিছু দৃশ দেখলে চোখে জল না এসে উপায় থাকে না।
৬. নাগিনা (১৯৮৬)
আশির দশকের মধ্যভাগে অনন্য প্রতিভাধর শিল্পী হওয়ার পাশাপাশি নিশ্চিত ব্যবসা সফল অভিনেত্রী হিসেবে বলিউডে নিজের অবস্থান পাকা করতে সমর্থ হন তিনি। হারমেশ মালহোত্রার নাগিনা সিনেমাটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
৭. মিস্টার ইন্ডিয়া (১৯৮৭)
একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে তিনি পরোপকারী অথচ অদৃশ ব্যক্তি মিস্টার ইন্ডিয়াকে খুঁজতে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে যান শ্রী দেবী। মিস্টার ইন্ডিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেন অনিল কাপুর।
৮. চালবাজ (১৯৮৯)
দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে শ্রী দেবী তার অভিনয় প্রতিভার অনবদ্য স্ফুরণ ঘটান এই সিনেমায়। কমেডি ঘরানার এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন পঙ্কজ পারাশর।
৯. চাঁদনি (১৯৮৯)
বলিউডের কিংবদন্তি পরিচালক যশ চোপড়ার এই সিনেমাটি এখনও ‘মেরি হাথও মেঁ’ গানের জন্য দর্শকদের কাছে সমাদৃত। এই সিনেমা অভিনয়ের মাধ্যমে শ্রী দেবী সমসাময়িক সময়টিতে শীর্ষ তারকা শিল্পীতে পরিণত হন। নাচ, গান, এবং অভিনয়ের অসাধারণ রসায়ন সিনেমাটিকে ওই বছরের সবচেয়ে ব্যবসা সফল সিনেমায় পরিণত করেছিল।
১০. লামহে (১৯৯১)
যশ চোপড়ার আরেকটি অনবদ্য রোমান্টিক সিনেমা লামহে। যদিও এটা অতটা ব্যবসা সফল ছিল না, শ্রী দেবী বহুমাত্রিক অভিনয় বোদ্ধা মহলে বেশ প্রসংশা কুড়িয়েছিল।
১১. খাসানা খানাম (১৯৯১)
রাম গোপাল ভার্মার এই সিনেমায় শ্রী দেবীর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ভেঙ্কটেম। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (তেলেগু) লাভ করেন।
১২. লাডলা (১৯৯৪)
দিব্যা ভারতীর দুঃখজনক মৃত্যুর কারণে তিনি এই সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। এই সিনেমায় তার দেওয়া, ‘আন্ডারস্ট্যান্ড? ইউ বেটার আন্ডারস্ট্যান্ড’ ছিল দর্শকদের মুখে মুখে। এতে তার বিপরীতে অভিনয়ে করেন অনিল কাপুর।
১৩. ইংলিশ ভিংলিশ (২০১২)
এই সিনেমার মাধ্যমে প্রায় ১৫ বছর পর আবারও রূপালী পর্দায় ফিরে আসেন এই অনন্য প্রতিভাধর শিল্পী। বিয়ের দীর্ঘ সময় পর একজন গৃহিনীর নিজেকে পুণরায় খুঁজে পাওয়া গল্প এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
১৪. মম (২০১৭)
এই সিনেমায় নিজের টিনেজ মেয়ের ধর্ষণের প্রতিশোধ আগুনে পুড়তে থাকা এক মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন শ্রী দেবী, ঠিক যেন সন্তানহারা বাঘিনী।