ভারতের আসাম রাজ্য সরকার সেখানকার ‘বৈধ নাগরিক’দের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যে তালিকায় প্রায় দেড় কোটি বাসিন্দার নাম নেই। তাদের প্রায় সবাই মুসলিম।
এ নিয়ে আসামজুড়ে গভীর আতঙ্ক বিরাজ করছে। তালিকায় যাদের নাম নেই, তাদেরকে বের করে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আসাম। তবে কেবল এ রাজ্যটি নয়, গোটা ভারতজুড়েই তথাকথিত ‘রাষ্ট্রবিহীন’ লাখ লাখ মানুষের তালিকা করা হচ্ছে বলে হুমকি আসছে নানা মহল থেকে।
বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে।
দিল্লি থেকে মিকাই সাফীর পাঠানো প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, নববর্ষের পূর্ববর্তী মধ্যরাতের ঠিক আগ মুহূর্তে আসাম রাজ্য সরকারের প্রকাশিত ‘বৈধ’ নাগরিকের তালিকায় এক কোটি ৯০ লাখ নাম ছিল। ছিল না অন্য এক কোটি ৪০ লাখ বাসিন্দার নাম। এ তালিকা প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ হানিফ খান নামে একজন ট্যাক্সিচালকের লাশ পেয়েছে। কাছাড় জেলার বাসিন্দা ছিলেন হানিফ। তার স্ত্রী রুশকা বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, তালিকাটিতে নিজের নাম না থাকাতেই ও আত্মহত্যা করেছে।’ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা দু’বছর ধরে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল ভারতীয় মা ও আফগান বাবার সন্তান হানিফকে।
দু’বছর আগে, আসাম সরকার একাত্তরের মার্চ মাসের পূর্ববর্তী সময় থেকে এ রাজ্যে বসবাসকারী হিসেবে যারা নিজেদের শেকড় প্রমাণ করতে পারবে, তাদের চিহ্নিত করে অন্য অধিবাসীদের বিতাড়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিল।
৩১ ডিসেম্বর রাতে প্রকাশিত তালিকাটিকে বলা হচ্ছে ‘অসম্পূর্ণ’। এরই মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি আসছে যে, গোটা ভারতজুড়েই লাখো মানুষের তালিকা করা হচ্ছে ‘রাষ্ট্রবিহীন’ পরিচয়ে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করছে যে, দেশটিতে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশী নাগরিক অবৈধভাবে কর্মরত আছে।
আসামে এখন নতুন এক আশ্রয়কেন্দ্র বানানো হচ্ছে- যেখানে তথাকথিত বিদেশীদের রাখা হবে, বের করে দেয়ার আগ পর্যন্ত। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এ রকম আরো ছয়টি কেন্দ্রে ইতোমধ্যে কমপক্ষে দু’হাজার লোককে আটক রাখা হয়েছে।
বিগত শতকের ’৮০-এর দশক থেকেই আসামে ‘অভিবাসীবিরোধী আন্দোলন’ চলছে। তারই জেরে কয়েকটি মুসলিম-অধ্যুষিত গ্রামে শুধু এক দিনে একযোগে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় এবং টানা সাত ঘণ্টায় কমপক্ষে এক হাজার ৮০০ মানুষকে খুন করা হয়। নির্যাতিতদের পক্ষে কাজ করা আইনজীবী আমান ওয়াদুদ বলছেন, ‘বিদেশী বলে আখ্যায়িত করে এদের সাথে এমন আচরণ করা হচ্ছে- যেন এরা ভিনগ্রহের মানুষ।’ ‘বিদেশী’ বলে অভিযোগে আচমকা গ্রেফতার হওয়া এবং ডিটেনশন ক্যাম্পে পচে মরার আশঙ্কায় আসামের অধিবাসী বাঙালি মুসলিমরা নিদারুণ উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আমান ওয়াদুদ।
৩১ ডিসেম্বরের তালিকাটিকে বলা হচ্ছে ‘অসস্পূর্ণ’; আগামী ৩১ মে সরকার চূড়ান্ত তালিকা ছাড়বে এবং তখন বহিষ্কারের হুমকিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়বে লাখের হিসাবে। এদের নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বলেছেন, ‘ওরা সাংবিধানিক অধিকার হারাবে; একটিমাত্র অধিকার ওদের থাকবে- জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার- অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়।