আড়াই দিনে ঢাকা টেস্টে হেরে যাওয়ার পর চিত্রনাট্য আমূল বদলে গেছে। আগেই জানা গিয়েছিল দুই ম্যাচের টি ২০ সিরিজেও পাওয়া যাবে না সাকিব আল হাসানকে। এবার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের খেলা নিয়েও দেখা দিল অনিশ্চয়তা। অনিশ্চয়তার কারণ আর কিছু নয়- ইনজুরি। তামিম আগেরদিন আঙুলে চোট পাওয়ার পর কাল ব্যাটিং অনুশীলনের সময় ব্যথা পেয়েছেন বাঁ হাতে। এদিকে মুশফিকের কব্জিতে চোট। সাকিব খেলছেন না। তার ওপর তামিম ও মুশফিকও যদি ছিটকে যান, বাংলাদেশ দলের চেহারাটা কী দাঁড়াবে? আজ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টি ২০ ম্যাচের আগে বাংলাদেশ শিবিরে তাই অস্বস্তির চোরাসে াত বইল। ম্যাচটি বিকেল ৫টায় শুরু হবে বলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকার পক্ষে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু তামিমের খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই কাল প্রতীয়মান হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বুধবার প্রাক-সিরিজ সংবাদ সম্মেলনে তামিম ও মুশফিক দু’জনকেই পাওয়ার ব্যাপারে আশার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কাল টি ২০ দলে মোহাম্মদ মিঠুনের সংযোজনে পরিষ্কার যে, মুশফিক ও তামিমের মধ্যে অন্তত একজনের খেলা হচ্ছে না আজ।
ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ ও টেস্ট সিরিজ হারের পর টি ২০-র আগে তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের ইনজুরিতে দলের অবস্থা টালমাটাল। বাড়তি চাপ এড়ানোর জন্য ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অন্য কিছু না ভেবে দলের সবাইকে নিজেদের খেলা উপভোগ করতে বলেছেন। দলের এই বাজে অবস্থায় বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে স্বস্তি ফেরাতে পারেন তরুণ ক্রিকেটাররা। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের দারুণ সুযোগ তাদের সামনে। মাহমুদউল্লাহকে ভরসা করতে হবে আফিফ, আরিফুলদের ওপরই। চোটের ঘনঘটার মধ্যে কাল এসেছে আরেকটি সুঃসংবাদ। আড়াই দিনে শেষ হওয়া দ্বিতীয় টেস্টে বাজে উইকেটের জন্য আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের নামের পাশে যোগ হয়েছে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট। এর আগে গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের সময় আউটফিল্ড খারাপ থাকায় দুটি ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ হয়েছিল। এবার সিরিজের প্রথম থেকেই উইকেট নিয়ে চর্চা চলছে। তবে ২০ ওভারের ম্যাচে উইকেট নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই মাহমুদউল্লাহর। নতুনদের কানে তিনি জপে দিচ্ছেন উপভোগের মন্ত্র, ‘টি ২০ ক্রিকেট উপভোগ করতে হবে। চাপ তো সব সময়ই থাকবে। এবার দলে অনেক নতুন খেলোয়াড় আছে। বিপিএলে যে পরিবেশ থাকে, তার থেকে এটা ভিন্ন। এসব চিন্তা না করে যে অবস্থায় যে কাজ করতে চাচ্ছি, সেগুলো করতে পারলেই সব ঠিক আছে। তাহলে ভালো করতে পারব।’
দলে নতুন মুখের সংখ্যা ছয়জন। এছাড়া মোহাম্মদ মিঠুন ও আবু হায়দার রনির টি ২০ অভিষেক হলেও তারা সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০১৬ সালে। আজ যদি তামিম ও মুশফিকুর রহিম না খেলতে পারেন, তাহলে দলে সিনিয়র ক্রিকেটার থাকবেন শুধু মাহমুদউল্লাহ! সঙ্গে সোম্য সরকার, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও সাব্বির রহমানের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় থাকবে। তরুণদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী আফিফ হোসেনকে নিয়ে প্রত্যাশা বেশি। এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ও ডান-হাতি অফ-স্পিনার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডে চারটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। এরপর দেশে ফিরে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে করেছেন আরও একটি হাফ সেঞ্চুরি। বিপিএলের শেষ দুই আসরেও প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন। এবার জাতীয় দলে নিজের সক্ষমতা দেখানোর সুযোগ। আফিফের মতো বিপিএলে ভালো করে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া আরিফুল হক, জাকির হাসান, আবু জায়েদ রাহি, নাজমুল অপুদেরও আন্তর্জাতিক ম্যাচে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ এটি। টিম কম্বিনেশন কেমন হতে পারে, সেটা আজ সকালে ঠিক করবে টিম ম্যানেজমেন্ট। কারণ তামিম ও মুশফিকের ইনজুরিতে সবকিছু ওলটপালট করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা এখন পর্যন্ত টি ২০তে মুখোমুখি হয়েছে সাতবার। বাংলাদেশ জিতেছে দুটিতে। হেরেছে বাকি পাঁচ ম্যাচে। টাইগারদের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে শ্রীলংকার সফলতম ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরা ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন। টি ২০তে দুই দলের লড়াইয়ে সর্বোচ্চ ২৩০ রান কুশল পেরেরার। তাকে পাওয়া না গেলেও লংকান ওপেনার উপুল থারাঙ্গা জানালেন, টি ২০ সিরিজে তারা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত এখানে ভালো করছি। ওয়ানডেতে ভালো করার পর টেস্টেও। আমাদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। এখন নতুন ফরম্যাটে খেলব, দলের মোমেন্টাম দারুণ। সবাই ভালো করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।’
এদিকে ২০ ওভারের ম্যাচে এখনও ধারাবাহিক হতে পারেনি বাংলাদেশ। এ বছর বাংলাদেশের সামনে অনেক টি ২০ ম্যাচ। আগামী মাসেই শ্রীলংকায় রয়েছে ত্রিদেশীয় টি ২০ সিরিজ। ২০২০ সালে রয়েছে বিশ্বকাপ। নতুনদের পারফরম্যান্স দেখে সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে পেতে বাংলাদেশের জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ।