বিএনপিকে নিয়ে সরকারের নানা পরিকল্পনা

Slider রাজনীতি

279632_11

 

 

 

 

বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর এক সপ্তাহ পার হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে বিএনপি কঠিন সময়ই পার করছে। এক দিকে গ্রেফতার অভিযান সামলে দলীয় কর্মসূচিতে মাঠে থাকার চ্যালেঞ্জ, অন্য দিকে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখে সতর্ক পদক্ষেপে সামনে এগোতে হচ্ছে শীর্ষ নেতাদের। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত সাত দিন দলটি ইতিবাচক রাজনীতির কৌশল প্রয়োগ করে বেশ ভালোভাবে পার করেছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির এই দৃঢ় অবস্থানে চিড় ধরানোর জন্য ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে চেষ্টা হচ্ছে নানাভাবে। গ্রেফতার অভিযান এই চেষ্টার প্রকাশ্য দিক হলেও, এর বাইরেও চলছে নানা কলাকৌশল ও পরিকল্পনা।

বেগম খালেদা জিয়ার জামিন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে এমন ধুয়া ইতোমধ্যে তোলা হয়েছে। মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি এখনো হাতে পাননি বিএনপির আইনজীবীরা। কমপক্ষে ৩৬টি মামলার বেড়াজালে বন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন কবে নাগাদ মুক্তি পেতে পারেন, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর আছে, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপিকে কিভাবে দুর্বল করা যায়, তা নিয়ে নানা পরিকল্পনা আঁটা হচ্ছে।

ক্ষমতাসীনদের জন্য আগামী নির্বাচনের পথ সুগম করতেই এসব করা হচ্ছে। সরকারি দলের টার্গেট টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা। সেই নির্বাচনে বিএনপির রূপ কী হবে তা এখনি বলা না গেলেও, খালেদা জিয়া যদি নির্বাচন করতে না পারেন, তাহলে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিমত্তা অটুট থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ ক্ষমতাসীন দল একটি দুর্বল বা ভঙ্গুর বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে সক্ষম হলে, সেটি তাদের জন্য দারুণ প্লাস পয়েন্ট হবে।

দলীয় চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার পর বিএনপি এখন কী করবে সে দিকে দৃষ্টি সবার। রাজনীতির গতি-প্রকৃতি এবং সরকারের কৌশল কি তাও জানার চেষ্টা করছে অনেকেই। বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও বিএনপি সংযত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তবে রায়পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিএনপি সহিংস হয়ে উঠতে পারে ধরে নিয়ে সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা না হওয়ায় এখন নতুন হিসাব-নিকাশ চলছে। এ ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করা এবং বিএনপিকে খণ্ডিত করে নির্বাচনে আনাকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার জেলপরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সরকার দেখছে, বিএনপির আন্দোলনের যে প্রকৃতি তা প্রশাসন এবং পুলিশ ব্যবহার করে সামাল দেয়া সম্ভব। তাদের মতে বিএনপির যেসব সক্রিয় নেতাকর্মী রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আগেই একাধিক মামলা রয়েছে। ওই সব মামলার পাশাপাশি নতুন করে আরো মামলা এবং গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হলে এই আন্দোলন দানা বাঁধতে পারবে না। আন্দোলন মোকাবেলায় সরকার ভিন্ন আরেকটি কৌশলের কথাও ভাবছে। সূত্র জানিয়েছে, সরকার বিএনপিতে ওয়ান-ইলেভেনের সময়ের মতো দু’টি ধারা সৃষ্টির কৌশলে অগ্রসর হওয়ার কথা ভাবছে।

সে ক্ষেত্রে সবার বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নতুন স্রোত তৈরি করে বেছে বেছে তাদেরকে নতুন মামলায় জড়ানো হবে। পাশাপাশি গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হলে বিএনপিতে গ্রুপিং সৃষ্টি করা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই কৌশল বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে নেতাকর্মীদের ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানানোর পর সাধারণ কর্মীরা সজাগ ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারাই এখন ঝুঁকি নিয়ে সর্বাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

সূত্র জানায়, বিএনপিতে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান অনুসারীদের চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেছে সরকারের একাধিক সংস্থা। লক্ষ্য তাদের নতুন মামলায় জড়িয়ে দলে ভাঙন সৃষ্টি করা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মধ্যেও এ কৌশল প্রয়োগের কাজ শুরু হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। আগামী জুন-জুলাই মাস পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত রাখা হতে পারে। ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হলে বছরের মধ্যভাগেই প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিএনপিকে বশে এনেই এই প্রক্রিয়ায় হাত দিতে চায় সরকার।

এ দিকে একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপিকে নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা যাই হোক না কেন দলের ভেতরে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে ঐক্য বজায় রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডকে দলের নেতাকর্মীরা মোটেই স্বাভাবিকভাবে নেননি। গত ৯ বছরে হামলা-মামলায় সর্বস্বান্ত হলেও তারা বিএনপিকে তাদের রাজনৈতিক ঠিকানা হিসেবে মনে করছেন। বিএনপির সভা-সমাবেশে বিপুল লোকসমাগম তার বড় প্রমাণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *