ভয়হীন ফুটবলই সাফল্যের রহস্য

খেলা

pic-15_158662কিংস কাপের ‘কিং’রা দেশে ফিরেছে। বীরের বেশে ফিরেছে, ফুলেল সংবধর্নায় তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে ফুটবল অনুরাগীরা। ইদানীং জাতীয় দলের এমন অভ্যর্থনার সুযোগ না মিললেও জাতীয় দলের এগারো সদস্য নিয়ে গড়া শেখ জামাল এখন প্রায় বাংলাদেশ দল। লাল-সবুজের পরিবর্তে হলুদ জার্সিতে তারা ভুটান মাতিয়ে গত রাতে ফিরেছে ঢাকায়। আর ফিরেই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর মিডফিল্ডার সোহেল রানার ঘোষণা, ‘আমাদের মানসিকতা পাল্টে গেছে অনেকখানি। এখন মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ার জন্য নামি না। শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করি, ম্যাচ না জেতা পর্যন্ত লড়াই করি।’ আগে আন্তর্জাতিক ম্যাচ কম খেলা হতো বলে ফুটবলারদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকত, বিদেশে খেলতে গেলে ভয়ে কুঁকড়ে যেত। ইদানীং ক্লাব পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচের পাশাপাশি ফুটবল ফেডারেশনও আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করছে। তাতে ভয় কাটছে, জেতার সাহস বাড়ছে। সেটার বড় প্রমাণ কিংস কাপের সেমিফাইনালে এমএমসির বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছে শেখ জামাল। তবে এটাও ঠিক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে সাত হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতার কোনো দেশে গিয়ে খেলা বেশ কঠিন। তাই ফাইনালের নায়ক ইয়াসিন বলছেন, ‘থিম্পুতে খেলা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল আমাদের জন্য। উচ্চতার কারণে আমাদের নাক দিয়ে রক্ত পড়ত। এর মধ্যেও আমরা খেলাটা উপভোগ করার চেষ্টা করেছি।’ কিন্তু ঘরোয়া ফুটবলেও যে ডিফেন্ডার ইয়াসিনের এমন গোল দেখা যায়নি! ‘আগে কর্নার হলে নাসির উদ্দিন ওপরে চলে যেত, আমি ডিফেন্স পাহারা দিতাম। এবার কোচের নির্দেশ ছিল দুই ফুলব্যাক ডিফেন্সে থাকবে, আমি আর নাসির হেডের জন্য যাব। দিনটাও আমার ছিল, গোল হয়ে গেছে’, মহামূল্য গোলে দলের হাতে শিরোপা তুলে দিতে পেরে ভীষণ গর্বিত শেখ জামালের এই সেন্টারব্যাক।

এমন এক কোচের হাত ধরে শেখ জামাল কিংস কাপের শিরোপায় শোভিত হয়েছে, যাঁর মাথার ওপর ঝুলছে নিষেধাজ্ঞার খড়গ। বাফুফে আয়োজিত ফুটবলীয় কর্মকাণ্ড থেকে মারুফুল হককে বিরত থাকতে হবে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তাই বলে তিনি থেমে নেই, প্রথমবারের মতো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নিজের সামর্থ্য মেলে ধরেছেন কিংস কাপে, ‘এ টুর্নামেন্টটা আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জের ছিল। কারণ নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও শেখ জামাল আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। কিংস কাপ জিততে না পারলে হয়তো তারা আমাকে রাখত না। শেষ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জটা আমার জন্য উপভোগ্য হয়েছে।’ ২০০৮ সালে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে ফুটবল কোচিং শুরু করা এই দেশি কোচের ক্যারিয়ারে লিগসহ বড় সব টুর্নামেন্টের সাফল্য আছে। আছে শেখ রাসেলের হয়ে ট্রেবল জেতানোর অনন্য নজির। অল্প সময়ে তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা শিরোপা মানছেন মোহামেডানের সুপার কাপ জয়কে, ‘ক্যারিয়ার শুরুর পরের বছরই মোহামেডানকে সুপার কাপ জিতিয়েছি, আবাহনীকে হারিয়েছিলাম। এর আনন্দ অনেক বেশি, এটাকেই এগিয়ে রাখছি আমি।’ ঘরোয়া মৌসুম শুরু হবে সামনে, তার আগে বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতানোর পর শেখ জামালের কোচ আত্মবিশ্বাসী, ‘ঘরোয়া ফুটবলে সবগুলো শিরোপা জিততে চাই আমরা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *