ক্রিকেটে আর থাকতে চান না মাহমুদ

Slider খেলা

edc40cdab0687c9c029e3d62b99e3fc3-5a8287c393288

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ভেঙে পড়েছেন খালেদ মাহমুদ। সেই ভেঙে পড়া ক্ষুব্ধ করে তুলেছে তাঁকে। সেই ক্ষোভ থেকে তিনি বললেন ‘মিডিয়া ফিশি’, সংবাদমাধ্যমে যা লেখা হয় তা ‘নোংরা’। সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, হয়তো সংবাদমাধ্যমের কারণেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ‘আটকে’ আছে। সবকিছু তাঁর কাছে এতই ‘নোংরা’ লাগছে যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গেই নাকি আর কাজ করতে ইচ্ছে করছে না বিসিবির পরিচালক, গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান, ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, ঘরোয়া ক্রিকেটের তিনটি দল ও একটি একাডেমির কোচ, নির্বাচক কমিটির সদস্য, ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের সহসভাপতি, এবং জাতীয় দলের ম্যানেজার ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মাহমুদের।

মাহমুদ বিসিবির এত বেশি পদ অলংকৃত করে আছেন যে তাঁকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘সুপারম্যান’ বললেও বাড়াবাড়ি হবে না। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ার পর হঠাৎ জাতীয় দলে কোচ সংকট দেখা দিলে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পদ দিয়ে মাহমুদকেই দায়িত্ব দেওয়া হয় দল সামলানোর। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দলীয় পরিকল্পনা থেকে শুরু করে গেম প্ল্যান সাজানো, এমনকি একাদশ নির্বাচনেও তাঁর দুর্বলতা প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। সংবাদমাধ্যমে স্বাভাবিকভাবেই এসব নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু মাহমুদ শেষ পর্যন্ত সেসব নিতে না পেরে বিস্ফোরিত হলেন। সংবাদমাধ্যমের ওপর উগরে দিলেন যত ক্ষোভ।
মিরপুরে কাল অনুশীলনের মাঝে কথা বলার সময় মাহমুদের দাবি, ‘অনেক ভালো কোচিং হয়েছে এবার।’ মিরপুর টেস্টে লজ্জাজনক হারের পেছনে খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা ও সাকিবের অভাবকেই দেখিয়েছেন বড় করে। টিম ম্যানেজমেন্টের দেওয়া রেসিপি অনুযায়ী স্পিন ভালো খেলা এবং স্পিন বোলিংটাও ভালো করা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিছিয়ে দেওয়া হয় স্পিন উইকেট। অথচ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর নাকি উইকেটে কোনো সমস্যাই দেখছেন না, ‘যদি উইকেটকে দোষ দিতে হয়, আমাদের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। উইকেট একটা অজুহাত। আমরা বোলিং, ব্যাটিং ভালো করতে পারিনি।’ এ ছাড়া সাবেক কোচ হাথুরুসিংহেকে নিয়ে অতিরিক্ত ভেবে ফেলাও দলের ওপর চাপ তৈরি করেছে বলে তাঁর মনে হয়।
সবকিছু মিলিয়ে চাপে আছেন মাহমুদও। কিন্তু নতুন কোচ পাওয়া না গেলে আগামী মাসে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় নিদাহাস কাপেও কি মাহমুদই দায়িত্বে থাকবেন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে? বিষয়টি বোর্ডের ওপর ছেড়ে দিয়ে প্রথমে বলেছেন, ‘কাজ করব না, এ কথা কখনোই বলতে চাই না। কিন্তু বাঙালি কেউ কাজ করলে সেটা আসলে সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমি এখনো টিকে আছি বাংলাদেশ হেরে যাওয়ার পরে, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’ পরে আবার বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি আর আগ্রহী না। আমার আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গেই কাজ করতে ইচ্ছে করছে না। সত্যি কথা বলতে গেলে আমার আসলে নোংরা লাগছে। এখানে আমার কোনো স্বার্থ নেই। আমি আর আগ্রহী না।’ ক্ষুব্ধ মাহমুদের আবেগপ্রবণ হওয়ার এখান থেকেই শুরু। খারাপ ফলের পেছনে তাঁর পরিকল্পনার ভুল থাকতে পারে, স্বীকার করেও যেন বলতে চাইলেন আরও কিছু, ‘…তবে আরও স্টোরি তো আছে।’
মাহমুদের রাগ সংবাদমাধ্যমের ওপরই বেশি। সংবাদমাধ্যম নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘নোংরা বলতে গেলে, মিডিয়াতে যেভাবে লেখা হয়। মিডিয়ারও একটা ভূমিকা আছে যে আমরা এত ফিশি হয়ে যাচ্ছি। এখন মিডিয়া ফিশি। মিডিয়ার কারণে আমাদের ক্রিকেট আটকে আছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। মিডিয়াতে ভালো-খারাপ সবই হবে। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটের জন্য খুব কঠিন।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে মাহমুদ আবাহনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে সাব্বিরকে খেলিয়ে মোসাদ্দেককে আবাহনীর হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলতে ছেড়ে দেওয়া নিয়েও তাই উঠেছে প্রশ্ন। তবে কি আবাহনীকে সুবিধা দিতেই চট্টগ্রামে ভালো খেলার পরও মিরপুর টেস্টে সুযোগ পেলেন না মোসাদ্দেক! এ প্রসঙ্গে মাহমুদ একটু বেশিই আবেগপ্রবণ, ‘মোসাদ্দেক আর আবাহনী যদি বাংলাদেশের ম্যাচ হারার কারণ হয়ে যায়, তাহলে খুব কঠিন আসলে। ও ৫৩ বলে ৯ রান (আসলে ৮) করছে, আমিও দেখেছি। আমারও ক্রিকেটজ্ঞান আছে।’ ৮৩ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি। অনেক বছর হয়েছে, চুলও পেকে গেছে এখন। কে পারে, কে পারে না; কখন কাকে দরকার-এসব আমরাও বুঝি।’
সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মত প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, এমন দাবিও করেছেন মাহমুদ, ‘চন্ডিকা চলে গেল কেন, এটা প্রতিষ্ঠা করানো হয়েছে। আমরা তো বাচ্চা-খোকা না এখন। সবাই বড় হয়েছি। অনেক কিছু প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমার পেছনে যদি লেগে থাকা হয়, আমি কোনো দিন ভালো করলেও ভালো হব না।’ সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে রকম লেখালেখি হচ্ছে তাতে তিনি শঙ্কিত, ‘এমনও শুনছি যে রাস্তায় গেলে আমাকে মারও খেতে হতে পারে। তো ক্রিকেট খেলার জন্য মার খেতে হলে এটা তো বিব্রতকর আসলে।’
সব মিলিয়ে কাল দুপুরে খালেদ মাহমুদের কথাবার্তায় পরিষ্কার, চাপটা আর নিতে পারছেন না তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *