‘আমরা তো পেইন্টিংয়ের মানুষ, রংতুলি নিয়েই আমাদের কাজ। একটা রঙের সঙ্গে আরেকটা রং মিলিয়ে যেমন ছবি আঁকি, রান্নাতে তেমনি এক উপকরণের সঙ্গে অন্যটা মিশিয়ে নতুন স্বাদ আনার চেষ্টা করি।’ বলছিলেন ফ্যাশন হাউস দেশালের উদ্যোক্তা ও গায়ক কনক আদিত্য। নকশার অনুরোধে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে তিনি রাঁধলেন স্ত্রী ইসরাত জাহানের পছন্দের রান্না।
জানালেন, বাড়িতে তাঁরা দুজন মিলেই রান্নার কাজটা করেন। পছন্দ করেন সেদ্ধ, স্টার ফ্রায়েড, স্টিমড বা হালকা তেলে রান্না যেকোনো খাবার। এদিকে ইসরাতের দুর্বলতা আছে ফুলকপি, শিম, মাছ, শুঁটকি, অনেক রকম ভর্তা দিয়ে খুদে ভাত, পাতায় মোড়ানো ছোট মাছ এই ধরনের খাবারের প্রতি।
কনক আদিত্য রান্নায় খুব সাধারণ উপকরণ ব্যবহার করতে ভালোবাসেন। তবে সেগুলোর ব্যবহারের ভিন্নতায় খাবারে নতুন স্বাদ আনার চেষ্টা করেন। যেমন পোলাও, পাতায় মোড়ানো ছোট মাছ, সবুজ ক্যাপসিকাম দিয়ে মুরগি রাঁধতে রাঁধতেই কনকের মাথায় চলে এল নতুন একটা রান্নার ভাবনা। বেশ কিছু রঙিন ক্যাপসিকাম ছিল বাড়িতে। সেগুলোতে মাছের পুর দিয়ে তৈরি করে ফেললেন ইসরাতের জন্য নতুন একটা খাবার। হেসে ইসরাত বললেন, প্রায়ই ও এমনটা করে।
নারকেল দুধে সাদা ভাত
উপকরণ: কালোজিরা চাল ২৫০ গ্রাম, নারকেলের দুধ দেড় কাপ, ৪টা পেঁয়াজের কুচি, ১টা তেজপাতা, নারকেল তেল ২ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৪টা।
প্রণালি: পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজ ও তেজপাতা খুব হালকা করে ভাজতে হবে। পেঁয়াজে বাদামি রং ধরার আগেই চাল ঢেলে একসঙ্গে ভাজতে হবে ২ থেকে ৩ মিনিট। তারপর নারকেলের দুধ ও লবণ দিয়ে রান্না করতে হবে। বলক এলে আস্ত কাঁচা মরিচ ছেড়ে দিয়ে ঢেকে রেখে অল্প আঁচে বসিয়ে রাখতে হবে। চাল ফুটে উঠলে নিচের চাল ওপরে এবং ওপরের চাল নিচে উল্টিয়ে নিতে হবে। তারপর ঢেকে কিছুক্ষণ দমে বসিয়ে রাখলেই তৈরি হয়ে যাবে নারকেল দুধে সাদা ভাত।
পাতায় মোড়ানো ছোট মাছ
উপকরণ: ছোট মাছ (মলা অথবা কাঁচকি) ২০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ৮টা, আদা বাটা ১ চা-চামচ, রসুন বাটা ২ চা-চামচ, ধনিয়া গুঁড়া আধা চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, ৮টা কাঁচা মরিচের ফালি, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, ধনেপাতা, স্বাদমতো লবণ, কলাপাতা ৮ টুকরা (৬ x ১০ ইঞ্চি)।
প্রণালি: সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর চার ভাগে ভাগ করে কলাপাতায় মুড়ে নিতে হবে। প্রতিটি পুরিয়া দুই প্রস্থ পাতায় মোড়াতে হবে যাতে ফেটে না যায়। পুরিয়াগুলোকে টিনের তৈরি ওভেনে অল্প আঁচে ২০ মিনিট রান্না করতে হবে। শুরু করার ১০ মিনিট পরে উল্টে নেবেন। খেয়াল রাখতে হবে যাতে পুড়ে না যায়। হয়ে গেল পাতায় মোড়া ছোট মাছ।
** ওভেনের বদলে ভাপ দিয়েও করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ধোঁয়ার গন্ধটা পাওয়া যাবে না।
টুনা মাছের সালাদ
উপকরণ: টুনা মাছ ২০০ গ্রাম, অর্ধেক ব্রোকোলি ৮ টুকরা, ১টা ছোট বিটরুট (পাতলা করে কাটা), গাজর ১টা, ফুলকপি ছোট ছোট ৮ টুকরা, আপেল ১টা, টমেটো ১টা, কামরাঙা ১টা, ধনে পাতা ১০টা ডাঁটা, পুদিনা পাতা ২টা ডাঁটা, কাজু বাদাম ১০টা, আগুনে পোড়া শুকনা মরিচ ১টা, গোল মরিচের গুঁড়া পরিমাণমতো।
সস বানানোর উপকরণ: লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, ভাজা জিরার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, অরেগানো, লবণ আধা চামচ, বিট লবণ আধা চা-চামচ।
প্রণালি: টুনা মাছের টুকরোগুলো ভাপে সেদ্ধ করে নিন। তারপর ছোট ছোট টুকরো করে সরিষার তেলে হালকা করে ভাজুন। মাছ ভাজার পর একই প্যানে কাজু বাদামগুলোও টোস্ট করে নিন। একে একে ভাপে সেদ্ধ করে নরম করে নিন ব্রোকোলি, ফুলকপি, গাজর আর বিটরুট। আপেল, কামরাঙা, টমেটো প্রয়োজনমতো কেটে রাখুন।
সস বানানোর জন্য লেবুর রসের সঙ্গে সরিষার তেল, জিরা গুঁড়া, অরেগানো আর দুই রকমের লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে ফেটতে থাকুন দুটো কাঁচা মরিচ দিয়ে। কিছুক্ষণ ফেটলেই ঘন সস তৈরি হয়ে যাবে।
সসের সঙ্গে মাখিয়ে নিন পোড়া মরিচসহ আগে প্রস্তুত করে রাখা অন্য উপকরণগুলো। তারপর ধনেপাতা, পুদিনাপাতা আর গোলমরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে লেবুর চাক দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ক্যাপসিকাম চিংড়িঝুরি
উপকরণ: ক্যাপসিকাম ৪টা (লাল, হলুদ, সবুজ), ছোট চিংড়ি ১ কাপ, নারকেল (কোরানো) আধা কাপ, দেশি পনির কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ৪টা, লবণ স্বাদমতো ও মাখন ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি: চিংড়ি ৮ থেকে ১০ মিনিট ভাপে সেদ্ধ করে নিয়ে হামানদিস্তায় পিষতে হবে। নারকেল আর পনির চিংড়ির সঙ্গে মাখাতে হবে। পেঁয়াজ ও মরিচ কুচি মাখনে হালকা ভেজে নিতে হবে। তারপর সবকিছু একসঙ্গে মাখাতে হবে। এখন ক্যাপসিকামগুলোকে বোঁটার দিকে আধা ইঞ্চি পরিমাণ কেটে বাটি বানাতে হবে। এর ভেতরে চিংড়ির পুর ঢুকিয়ে ওপরের কাটা অবশিষ্ট অংশটি দিয়ে ঢাকনার মতো করে ঢেকে দিতে হবে। তারপর আবার পুরোটা মিনিট দশেক ভাপে সেদ্ধ করতে হবে। হয়ে গেল ক্যাপসিকামে চিংড়িঝুরি। এখন গরম গরম পরিবেশন করুন।