রোহিঙ্গা হত্যা করে গণকবর, সেনাসহ গ্রেপ্তার ১৬

Slider জাতীয়

ae2496a5f7957c2ba8e7ed04a04631ce-5a8035a6080ec

 

 

 

 

 

হত্যার আগে ১০ রোহিঙ্গাকে এভাবে হাত পেছনে বেঁধে হাঁটু গেড়ে বসানো হয়। ছবি: রয়টার্সরাখাইন রাজ্যে ১০ রোহিঙ্গাকে সারিবদ্ধভাবে হত্যা ও গণকবর দেওয়ার ঘটনায় সাত সেনাসদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গা নির্যাতন ও হত্যার একের পর এক ঘটনার মধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্স সেখানের ইন ডিন গ্রামে নৃশংসতার ঘটনায় অনুসন্ধান চালায়। এ অনুসন্ধানের জের ধরে রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর গত বৃহস্পতিবার রয়টার্স ওই হত্যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর দুদিন পর আজ রোববার দেশটির সরকার ১৬ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। আজ রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

১০ রোহিঙ্গা হত্যা ও গণকবর দেওয়ার ঘটনা ঘটে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর। গত বৃহস্পতিবার রয়টার্সের প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তুলে আনা হয় রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের গ্রাম ইন ডিনে কীভাবে সেনাসদস্য ও গ্রামের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে।

আজ মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জো হেটেয় বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সেনাসদস্য, পুলিশসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ পদক্ষেপের ক্ষেত্রে রয়টার্সের প্রতিবেদনের কোনো যোগসূত্র নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যের ইন ডিন গ্রামে বৌদ্ধ প্রতিবেশী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ১০ জন রোহিঙ্গাকে ধরে এনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ও গুলি করে হত্যার পর গণকবর দিয়েছে।

মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জো হেটেয় বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সাত সেনাসদস্য, তিন পুলিশ ও ছয় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে। রয়টার্স এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই তা সেনাবাহিনীর তদন্তে উঠে আসে। এই গ্রেপ্তার রয়টার্সের প্রতিবেদনের জন্য নয়। তবে ওই ১৬ জনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন।

গত ১০ জানুয়ারি সামরিক বাহিনী জানায়, ওই ১০ রোহিঙ্গা সেনাসদস্যদের ওপর হামলাকারী ২০০ জনের একটি ‘সন্ত্রাসী’ দলের সদস্য ছিলেন। ওই সময় গ্রামবাসীর মধ্যে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন কয়েকজনকে তলোয়ার দিয়ে এবং সেনাসদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


হত্যার পর ১০ রোহিঙ্গাকে এভাবে গণকবর দেওয়া হয়। ছবি: রয়টার্সতবে সামরিক বাহিনীর এ বক্তব্যের সঙ্গে রাখাইন বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্য লোকজন জানিয়েছেন, ইন ডিনে সেনাবাহিনীর ওপর এত বিপুলসংখ্যক বিদ্রোহীদের হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্সকে জানিয়েছে, নিরাপত্তার জন্য সৈকতের কাছে আশ্রয় নেওয়া শত শত নারী-পুরুষ ও শিশুদের মধ্য থেকে ওই ১০ জন রোহিঙ্গাকে তুলে আনা হয়।

ইন ডিনে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে রয়টার্সের অনুসন্ধানের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয় মিয়ানমারে বার্তা সংস্থাটির দুই সাংবাদিককে। মিয়ানমারের নাগরিক দুই সাংবাদিক হলেন ওয়া লোন এবং কেয়াও সো উ। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সংগ্রহের অভিযোগে গত ১২ ডিসেম্বর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। দুজন পুলিশকেও সেই সময় গ্রেপ্তার করা হয়।
রয়টার্সের কাছে এ হত্যার বিষয়ে প্রমাণ চাওয়ার পর তা প্রকাশ করে বার্তা সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে মুখপাত্র জো হেটেয় বলেছিলেন, ‘আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করছি না। ঘটনা অস্বীকার করে সত্য আড়াল করছি না। যদি নির্যাতনের ব্যাপারে ‘অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ’ থাকে, তাহলে সরকার তা তদন্ত করবে।

গত বছরের আগস্ট মাস থেকে প্রায় ৬ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *