বিমা মালিক ও নির্বাহীদের সমিতি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের(বিআইএ) গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হয়েছেন রূপালী ইন্স্যুরেন্স’র মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পিকে রায়। এবার নিয়ে টানা ১২ বছর ধরে তিনি বিআইএ’র কার্যনির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন।
অথচ সমিতিটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একই ব্যক্তি একটানা ৬ বছরের(তিন টার্ম) বেশী কার্যনির্বাহী কমিটিতে থাকতে পারে না।
বিআইএ’র সভাপতি শেখ কবির হোসেনের বিশেষ পছন্দের মানুষ হওয়ার কারণে এই বিমা কর্মকর্তা বছরের পর বছর গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে বিআইএ’র কমিটিতে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০০৫ সাল থেকে পিকে রায় একটানা বিআইএ’র কার্যনির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৫ ও ২০১৬ এই দুই বছরের জন্যও তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ একটানা ১২ বছর ধরে বিআইএ’র কমিটিতে রয়েছেন পিকে রায়।
এই ১২ বছরের মধ্যে ৮ বছর নির্বাচনের মাধ্যমে এবং ৪ বছর অন্য সদস্যের পরিবর্তে বিআইএ’র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন পিকে রায়। এরমধ্যে ২০০৯ ও ২০১০ এই দুই বছর ইফতেখারের পরিবর্তে এবং ২০১১ ও ২০১২ এই দুই বছর মাহমুদুর নবীর পরিবর্তে কমিটিতে আসেন তিনি। আর ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন ২০০৫-০৬, ২০০৭-০৮, ২০১৩-১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৫-১৬ বছরের জন্য।
সূত্রটি জানায়, বিমা মালিক ও নির্বাহীদের সমিতি বিআইএ গঠিত হয় ১৯৮৮ সালে। প্রথম দিকে এ সমিতিটিতে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা রাখা হয় ৯ জন। এরমধ্যে ৬ জন সাধারণ বিমার এবং ৩ জন জীবন বিমার।
পরবর্তীতে ২০০০ সালে বেশ কয়েকটি নতুন বিমা কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া হলে ২০০১ সাল থেকে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫ জন করা হয়। এ সময় বিআইএ’র কার্যনির্বাহী কমিটিতে সাধারণ বিমা থেকে ১০ জন এবং জীবন বিমা থেকে ৫ জন সদস্য রাখার বিধান করা হয়।
এ পরিবর্তন আনার পরে ২০০১ ও ২০০২ এই দুই বছরের জন্য প্রথম বারের মতো বিআইএ’র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন পিকে রায়। এ সময় এআর ভূঁইয়ার পরিবর্তে বিআইএ’র কার্যনির্বাহী কমিটিতে আসেন তিনি। এরপর দুই বছর গ্যাপ দিয়ে ২০০৫ সালের নির্বাচনে ২০০৫ ও ২০০৬ সালের জন্য বিআইএ’র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন পিকে রায়।
যোগাযোগ করা হলে বিআইএ সভাপতি শেখ কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিআইএ’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একজন ব্যক্তি একটানা ৩ বারের(প্রতিবারে ২ বছরের জন্য নির্বাচিত) বেশি নির্বাচন করতে পারবেন না এটি সত্য। তবে কেউ ৬ বছরের বেশি কার্যনির্বাহী কমিটিতে থাকতে পারবেন না এমন কোন কথা বলা নেই। যেটি বলা আছে তা নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি যতদিন বিআইএ’র সভাপতি, পিকে রায়ও ততদিন কার্যনির্বাহী কমিটিতে আছেন। এর আগেও তিনি কমিটিতে ছিলেন। এবার নিয়ে তিনি টানা ১২ বছর কমিটিতে আছেন এটি সত্য। কিন্তু এই ১২ বছরের মধ্যে একবারও তিনি টানা ৩বার নির্বাচন করেন নি। কোন কারণে সদস্য পদ হারিয়েছেন এমন সদস্যের পরিবের্তে আমি তাকে কমিটিতে আনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিন বলেন, পিকে রায় খুবই দক্ষ যে কারণে তাকে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদে রাখা হয়েছে। তবে বিমা খাতে তিনি একাই দক্ষ না, আরও দক্ষ ব্যক্তি আছেন।
তবে নাম নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাধারণ বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোতে অসংখ্য দক্ষ নির্বাহীরা রয়েছেন। কিন্তু পিকে রায় শেখ কবির হোসেনের বিশেষ পছন্দের মানুষ হওয়ার কারণে তাকে বার বার কমিটিতে রাখা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, এক জন সদস্যের পরিবর্তে কেউ কমিটিতে আসলে এবং তিনি ওই মেয়াদে ১ বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করলে তা এক টার্ম হিসেবে বিবেচিত হয়। এরপর তিনি আর দুই টার্ম (৪ বছর) কমিটিতে থাকতে পারেন। পিকে রায় যে দুই দফায় অন্য সদস্যের পরিবর্তে আসেন প্রতিবারই তিনি এক বছরের বেশি সময় ধরে কমিটিতে ছিলেন। সে হিসেবে তাকে একটানা ৬ বছরের বেশি কমিটিতে রাখা বিআইএ’র গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে রূপালী ইন্স্যুরেন্স’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পিকে রায়ের মোবাইল ফোনে (মঙ্গলবার ও বুধবার) একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।